পাতালে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর তুরস্কের ক্যাপাডোকিয়া অঞ্চলের ‘ডেরিনকো আন্ডারগ্রাউন্ড সিটি’। ভূপৃষ্ঠের নীচে ৮০ মিটার গভীর পর্যন্ত বি¯তৃত এই শহর। কয়েক হাজার বছর আগে, বহিরাগত শত্র“দের হাত থেকে বাঁচতে সেখানে আত্মগোপন করতো বিভিন্ন জনগোষ্ঠী। রান্নাঘর, গোয়ালঘর, মদের দোকান, বাজার, স্কুল, গীর্জা ও কবরস্থানসহ একটি পূর্ণ শহরের প্রায় সকল আয়োজনই ছিলো সেখানে। কালের পরিক্রমায় আশ্চর্য এই শহরটি হারিয়ে গেলেও, পরে এর সন্ধান পান এক স্থানীয় ব্যক্তি।
তুরস্কের ক্যাপাডোকিয়া অঞ্চলে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে মাশরুম আকৃতির ছোট বড় অনেক পাহাড়। এদের গায়ের রং হলুদ ও গোলাপী। মোহনীয় রং ও অনন্য আকৃতির জন্য এদেরকে ‘ফেইরি চিমনিস’ নামেও ডাকা হয়।
এই ‘ফেইরি চিমনিস’ এর তলদেশে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পাতালপুরী ‘ডেরিনকো আন্ডারগ্রাউন্ড সিটি’। বহিরাগত শত্র“র হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য এই শহর গড়ে তোলা হয়। কয়েক হাজার বছর আগের এই শহরে আত্মগোপন করতো বিভিন্ন জনগোষ্ঠী। ক্যাপাডোকিয়ার ‘ফেইরি চিমনি’ পাহাড়ের নীচে ভূ-পৃষ্ঠের ৮০ মিটার গভীর পর্যন্ত বি¯তৃত এটি। গভীরতম এই পাতালপুরীর মোট আয়তন ৪৪৫ বর্গকিলোমিটার। ২০ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা ছিলো ভূ-গর্ভস্থ এই শহরের।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানায়, ডেরিনকো পাতালপুরীতে মোট ১৮টি স্তর রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৮টি স্তর খনন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। সেখানে রান্নাঘর, গোয়ালঘর, মদের দোকান, বাজার, স্কুল, গীর্জা ও কবরস্থানসহ একটি পূর্ণ শহরের প্রায় সকল অনুষঙ্গই রয়েছে। এক স্তর থেকে অন্য স্তরের মানুষদের সাথে যোগাযোগ করতে ছোট টানেলের মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলতো মানুষ। দরজা হিসেবে ব্যবহার করতো গোলাকার শিলার চাকা। ভূগর্ভস্থ এই শহরে ৫০টিরও বেশি গভীর ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে আলো বাতাস চলাচল করতো। আর পানি সরবরাহের জন্য ছিলো ৫৫মিটার গভীর একটি কুয়া।
শেষবার এই পাতালপুরীতে বসবাস করেছে ক্যাপাডোকিয়ান গ্রীকরা। ১৯২৩ সালে তাদের উচ্ছেদের মাধ্যম আশ্চর্য এই শহরের পতন ঘটায় অটোম্যান সম্রাট। এরপর কালের গর্ভে হারিয়ে যায় শহরটি।
১৯৬৩ সালে হারানো মুরগি খুঁজতে যেয়ে শহরটির সন্ধান পান এক স্থানীয় ব্যক্তি। পরে তুরস্কের প্রতœতাত্তি¡করা এটি খননের কাজ শুরু করেন। আর ১৯৬৯ সাল থেকে শহরটির ৮টি স্তর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয় ‘ডেরিনকো আন্ডাগ্রাউন্ড সিটি’।