পাকিস্তানের সাবেক সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্টের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মোশাররফ। এর আগে, পাকিস্তানের কয়েকটি গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
মোশাররফের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। এ পরিস্থিতিতে তার সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর এখন মোশাররফ বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। জানা গেছে, ফুসফুস, কিডনি এবং হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন সাবেক সেনাশাসক।
পারভেজ মোশাররফের জন্ম অবিভক্ত ভারতের দিল্লিতে ১৯৪৩ সালে। দেশভাগের পরে তাঁর পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে মোশাররফের নাম সেনাপ্রধান পদের জন্য সুপারিশ করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সে সময়ে সেনাবাহিনীতে মোশাররফের খুব কর্তৃত্ব ছিল। একপর্যায়ে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে মোশাররফের বিরোধ শুরু হয়। এরপর পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে সে দেশের সেনাবাহিনী। জারি হয় জরুরি অবস্থা। নওয়াজ শরিফকে সৌদি আরবে ‘স্বেচ্ছা নির্বাসনে’ পাঠিয়ে দেন মোশাররফ।
২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়ে ২০০২ সালে সাধারণ নির্বাচনে মত দেন তিনি। দেশে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার’ জন্য পশ্চিমা দুনিয়ার সুনজরে পড়েন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র অন্যতম ‘অংশীদার’ ছিলেন তিনি।
তবে, ২০০৬-এর শেষ থেকে নিজ দেশের বিচার বিভাগের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকেন মোশাররফ। শেষ পর্যন্ত ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর সেনাপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন মোশাররফ। গদি বাঁচাতে পাকিস্তানে পুনরায় জরুরি অবস্থা জারি করেন। কিন্তু, এবার আর জনগণের সমর্থন পাননি। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রেসিডেন্ট পদ থেকেও ইস্তফা দেন মোশাররফ।
২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে চলে গিয়েছিলেন মোশাররফ। ২০১৩ সালে নির্বাচন লড়তে পাকিস্তানে ফিরলেও বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় গ্রেপ্তার হন মোশাররফ। নিজের ফার্মহাউসেই গৃহবন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। চিকিৎসার জন্য ২০১৬ সালে তাঁকে দুবাই যাওয়ার অনুমতি দেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। সে বছর মার্চ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে অবশ্য সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করেছে ইসলামাবাদ। দেশদ্রোহের অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। সে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে যদি মোশাররফের মৃত্যু হয়, তা হলে তাঁর মরদেহ ইসলামাবাদের ডি-চকে ঝুলিয়ে রাখা হবে বলে রায় দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সন্ত্রাস-দমন আদালত।