তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামীকাল (রোববার, ৯ জুন) শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদি। তবে প্রথমবার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ফলে ম্লান হয়ে গেছে ‘ব্র্যান্ড-মোদি’র দাপট। বিশ্লেষকরা বলছেন, অপ্রত্যাশিত পুনরুত্থানের মাধ্যমে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি শক্তি নিয়ে পার্লামেন্টে ফেরা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের বাধার মুখে পড়তে হবে মোদিকে।
মোদি আর তার কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের দাপটে গেল এক দশকে মুছতে বসেছিল স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক অবস্থান। তাই ১৮তম লোকসভা নির্বাচন ছিল কংগ্রেসের অস্তিত্ব রক্ষার পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত জয় ধরা না দিলেও সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন কাকে বলে, দেখিয়ে দিয়েছে দলটি।
টানা তৃতীয় মেয়াদে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এবারের ভোটযাত্রা শুরু হলেও বিজেপি’র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে ভারতের ভোটাররা। ভীষণ দাপুটে টানা ১০ বছর শাসনের পর এবারই প্রথম পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে জোটের ওপর নির্ভর করেই ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।
সবকটি বুথফেরত জরিপকে ভুল প্রমাণ করে সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে দ্বিগুণের বেশি শক্তিতে পার্লামেন্টে কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন চমকে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের। ‘বিজেপি’র ফ্যাসিবাদি শাসন’ রুখে দেয়ার অঙ্গীকার জানিয়েছে ২৮ দলীয় বিরোধী জোটের নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস।
কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘মোদির নেতৃত্বে বিজেপি’র ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের ইন্ডিয়া জোটের লড়াই অব্যাহত থাকবে। বিজেপি সরকারের শাসনের জন্য নয়, বরং জনতার প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেব আমরা।’
গেল বছর প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের মধ্যে দলগত, মতাদর্শগত আর ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব আছে ঠিকই; কিন্তু মোদির একচেটিয়া আধিপত্য থেকে ভারতের গণতন্ত্র আর পার্লামেন্ট এবং তার কট্টর জাতীয়তাবাদে কোণঠাসা সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম ও দলিতদের রক্ষার লক্ষ্যে একজোট তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্লামেন্টের এক দশকের আধিপত্য খর্ব হওয়ায় এবার শাসনের ধরন বদলাতে হতে পারে ৭৩ বছর বয়সী এ নেতার। না হলে পার্লামেন্টে বিরোধীদের বাধার মুখে পড়তে হবে তাকে।
চ্যাথাম হাউজের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. চিতিজ বাজপায়ি বলেন, ‘মোদি ব্র্যান্ড’ এর ওপর যে কিছুটা হলেও দাগ পড়েছে, তা স্পষ্ট। অর্থনীতি আর রাজনীতি- দু’দিক থেকেই অবস্থান হারিয়েছেন মোদি। তার দলের হিন্দু জাতীয়তাবাদ, হিন্দুদের প্রাধান্য দেয়ার আদর্শ সারাদেশে খুব একটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও তরুণদের বেকারত্বের উচ্চ হার, বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকা নিয়েও অসন্তোষ বেড়েছে।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে শীর্ষ পঞ্চম ভারতের বর্তমান বার্ষিক প্রবৃদ্ধি তিন লাখ ৪১ হাজার কোটি ডলার। অথচ গেল এপ্রিলে দেশটিতে বেকারত্বের হার আট শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, যা একমাস আগেও ছিল সাড়ে সাত শতাংশের কম। ‘মেইক ইন ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে মোদি সরকার উৎপাদন বাড়াতে নানা ব্যবস্থা নিলেও বিশ্বব্যাংক বলছে, বৈশ্বিক উৎপাদনে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের অংশীদারিত্ব তিন শতাংশেরও কম; যেখানে জনসংখ্যায় ভারতের পরে থাকা প্রতিবেশি চীনের বৈশ্বিক উৎপাদন ২৪ শতাংশ।