ভারত সফরে এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর আজ সোমবারের এই দিল্লি সফর পুতিনের দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণ। সফরকালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক ঝালাই করবেন পুতিন। তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। সই হবে একাধিক চুক্তি। তবে পুতিনের এই সফরে আলাদা করে নজর কাড়ছে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি।
গত শতকে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যায় মস্কো সব সময় দিল্লির পাশে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর উত্তরসূরি রাশিয়ার সঙ্গে সেই সম্পর্ক এগিয়ে নিচ্ছে দিল্লি। ভারতের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়, ইন্দো–রুশ সম্পর্ক ‘বিশেষ ও কৌশলগত মিত্রতার’।
রাশিয়া ভারতের অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী। অস্ত্র কেনাবেচায় দুই দেশের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। ভারত এখন তার অস্ত্রসম্ভার আধুনিক করতে চাইছে। আধুনিক করতে চাইছে সশস্ত্র বাহিনীকে। এ জন্য রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছে দিল্লি। এর আওতায় রাশিয়ার কাছ থেকে দূরপাল্লার এস–৪০০ ভূমি থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে ভারত।
এই চুক্তির আর্থিক মূল্য ৫০০ কোটি ডলারের বেশি। ২০১৮ সালেই সই হয়ে রয়েছে প্রাথমিক চুক্তিটি। পুতিনের এবারের সফরে চূড়ান্ত রূপ পাবে সেটি। ভারতে পৌঁছে যাবে রাশিয়ার অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস-৪০০। আগামী বছরের শুরুর দিকে এ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অন্তত দুটি ইউনিট দেশটির উত্তর ও পূর্বে চীন সীমান্তে মোতায়েন করবে ভারত। এ ছাড়া এই চুক্তির আওতায় উত্তর প্রদেশের আমেথির অস্ত্র কারখানায় রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একে-৪৭ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তৈরি করবে ভারত।
তবে এই চুক্তি নিয়ে দিল্লি ও মস্কো আরও কাছাকাছি এলেও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। রাশিয়ার কাছ থেকে দূরপাল্লার এস–৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষাব্যবস্থা কিনলে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে আগেই বিশ্বের দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানায়, ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে হরিয়ানার ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির গবেষক তাতিয়ানা বেলুসোভা বলেন, ‘৫০০ কোটি ডলারের ইন্দো–রুশ প্রতিরক্ষা চুক্তি ওয়াশিংটনের মাথাব্যথার বড় কারণ। তবে দিল্লি অনেক আগে থেকেই প্রতিরক্ষা খাতকে আরও আধুনিক ও বৈচিত্র্যময় করার কথা জানিয়ে এসেছে।’