জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে শতাধিক লোক আহত হন। সে ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম তারেক রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ ছাত্রলীগের গায়ে কোনো হাত তোলেনি।
মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকরা ছাত্রলীগের কর্মীদের ‘পুলিশ তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেছ ‘ এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা উপস্থিত ছিলেন। আপনারা নিজেরাও দেখেছেন যে, এখানে আমরা হামলা করেছি কি-না?’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত তারা সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তখন আমরা তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করেছি যে, তোমরা শান্তিপূর্ণভাবে বের হয়ে যাও। তারা তখন ইট-পাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে। আমরা তাদের শুধু শান্তভাবে বের হয়ে যাওয়ার জন্য সহায়তা করেছি। যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা তাদের নিজেদের হুড়োহুড়ির কারণে হয়েছে। এখানে পুলিশ তাদের গায়ে কোনো হাত তোলেনি। তাদের কোনো লাঠিচার্জ করেনি।’
এস এম তারেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, প্রায় এক মাস আগে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষিত হয়েছে। সেই কমিটিতে পদবঞ্চিত কিছু নেতৃবৃন্দ মাঝে মাঝে শহরে বিক্ষোভ করছে। দুই গ্রুপই মিছিল করছে। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের যতটুকু আইনি সহায়তা দেওয়া দরকার তাদের দিচ্ছি। শহরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত ফোর্স নিয়োগ করছি।’
প্রতিদিন সন্ধ্যায় পুলিশ বাহিনী আতঙ্কে থাকে উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম তারেক রহমান বলেন, ‘প্রতি সন্ধ্যায় তাদের মিছিল বের হলে কোথায় কি ঘটে যায় তা নিয়ে আতঙ্কে থাকি। আপনারা দেখে আসছেন, যতটুকু নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার তা আমরা করে আসছি। যে কারণে কোনো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, আজ কিছু একটা ঘটতে পারে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং যেসব জায়গায় ফুল দেওয়ার অনুষ্ঠান ছিল সেসব জায়গায় আপনারা খেয়াল করে থাকবেন যে, প্রচুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। যে কারণে সকাল থেকে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম মূলত শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোক দিবসের আলোচনা সভায়। সেখানে এমপি মহোদয়, জেলা প্রশাসক মহোদয় ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের একটা গ্রুপ সভায় প্রবেশ করলো। আমরা ভাবলাম, ঠিক আছে তাহলে আরেকটা গ্রুপ সহজভাবে ফুল দিতে পারবে। আলোচনা চলাকালে আমি লক্ষ্য করলাম, ওই গ্রুপটা মাঝেমধ্যে বের হয়ে যাচ্ছে। আমার পাশে যারা ছিলেন তারা ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন। তারাও বললেন, সমস্যা কী? এরা বার বার এভাবে বের হয়ে যাচ্ছে কেন?’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম তারেক রহমান বলেন, ‘আমি তখন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম যে, বাইরে কোনো সমস্যা আছে কি না? তখন তিনি জানালেন, শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামের তিন তলায় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ রয়েছে তারা ওপর থেকে ইট নিক্ষেপ করছে। আর এখান থেকে যারা বের হচ্ছে তারা ওদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করছে। এভাবে পাল্টাপাল্টি ইট নিক্ষেপ করার কারণে ওখানে দাঁড়ানো পুলিশের একটি গাড়ির গ্লাসটা ভেঙে যায়।’
তিনি বলেন, ‘তারপর আমরা বের হয়ে আসি। এমপি মহোদয়কে দেখায় যে, দেখুন গাড়িটা ভেঙে গেছে। আমরা তো সব সময় আপনাদের পাশে আছি। ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা তাদের বলি যে, সবসময় তোমরা সংযত হও। আমি নিজে কথা বলেছি তাদের সঙ্গে অনেকবার। তাদের বলেছি যে, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান থাকলে তা সংযতভাবে করো। যেন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে। তোমাদের যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়, আমরা সেটা দেখবো।’
তারপরও এমন একটা ঘটনা এড়াতে পারা গেল না উল্লেখ করে এস এম তারেক রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলেছি। এমপি মহোদয় আমাদের বলেছেন যা হয়েছে তা তিনি সমাধান করার চেষ্টা করবেন। পরবর্তীতে একটি গ্রুপ ভিতরে ছিল। তাদের বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয় শান্তিপূর্ণভাবে। সে সময় হয়তো একটু হুড়োহুড়ি হয়েছে। একসঙ্গে অনেকগুলো ছেলে বের হয়েছে। সে সময় হয়তো দৌড়াদৌড়িতে কেউ হয়তো পড়ে গিয়েছে। আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা নিজেরাও দেখেছেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমরা যতটুকু পেরেছি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান শেষ করার চেষ্টা করেছি। তবে তাদের দুই পক্ষের উত্তেজনার কারণে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে এবং সেখানে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে পরবর্তী কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক হয়েছে। আমরা আমাদের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। তারপর আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
আমরা এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করিনি। আমরা চেয়েছি যে, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অনুষ্ঠানটা শেষ হোক। সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আপনারা দেখেছেন আমরা আমাদের ফোর্সদের বলেছি যেন কোনো আক্রমণাত্মক আচরণ না করে। যেহেতু এমপি মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। তিনি বলেছেন যে, ব্যাপারটি সমাধান করার ব্যবস্থা করবেন।’