(রংপুর মেডিক্যাল কলেজকে ২০০০ বেডে উন্নীতকরণ, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চালু, স্থলবন্দরগুলো আধুনিকায়ন, আম আলু কলা নির্ভর কৃষিভিত্তিক শিল্পস্থাপন, পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম, যানজট নিরসনে ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন দাবি।)
আগামী ২ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর আগমণকে কেন্দ্র একদিকে যেমন নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছাসের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি তাদের বিভিন্ন দাবি পূরণে প্রত্যাশাও গড়ে উঠেছে।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ২০০০ বেডে উন্নীতকরণ, রংপুরে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রংপুর নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠণ, বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো চালু করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চালু, স্থলবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন, আম, আলু ও কলা নির্ভর কৃষিভিত্তিক শিল্পস্থাপন ও পুরনো শিল্পগুলোকে সচল করা, পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ, লালমণিরহাটে বিমানবন্দরটিকে সচল ও আধুনিকায়ন করা ও যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার এবং শ্যামাসুন্দরি খালসহ বিভিন্ন নদ-নদী ও খালগুলোকে খনণের মাধ্যমে জলাধার হিসেবে সংরক্ষণ ও নৌপথগুলো চালু করা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমণের প্রাক্কালে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই দাবি জানিয়েছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন:
‘হামার দেড় বিশ জমি ছিল, সব ভাঙ্গি গেইচে। এখন হামরা পঙ্গু হয়া গেচি। ছাওয়া-পোওয়া নিয়া খুব কস্টের ভেতরোত আচি। শেখের বেটির (প্রধানমন্ত্রী) কাছে হামারগুলার অনুরোধ, নদীটা খোড়নের তারাতারি ব্যবস্থা চাই। তোমরা যখন রংপুর আসতেছেন, আলোচনা করি যাও, বলি যাও অমুক দিন খোড়ন শুরু কইরবেন। শুক্রবার বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন ৭০ বছর বয়সি বাবলু মিয়া। রংপুরের গঙ্গাচড়ার পূব ইচলিতে তিস্তার গর্ভে বিলীনের পথে চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের স্মৃতি বিজরিত স্কুলটির পাশেই বাড়ি ছিল বাবলু মিয়ার। ভিটেমাটিসহ প্রায় ৯ একর জমি তিস্তায় খুইয়ে নিঃস্ব বাবলুর একটাই চাওয়া তিস্তা খননের।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী এ প্রতিবেদককে জানান, তিস্তা অববাহিকার জীবনজীবিকা বাঁচানোর লড়াই। এই লড়াইয়ের স্বার্থে আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা চাই, এই জীবন-জীবিকা বাঁচানোর তাগিদে তিস্তা মহাপরিকল্পনার ঘোষণা রংপুরের জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিবেন। এই ঘোষণা দিয়ে একনেকে পাশ করবেন এবং এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্বোধনের কাজ শুরু করবেন।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেস্টা ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশে চলমান যত মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে, তার থেকে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট হলো তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এখানে ৫ টি জেলার ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের দুর্ভোগের বিষয় জড়িত। এখানে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রসীমার নীচে যাচ্ছে। আজকের রাজা, কালকে ফকির হচ্ছে। তিস্তা তার গতিপথ পরিবর্তন করছেন প্রতিনিয়ত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জনসভাথেকে তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও কার্যকরের ঘোষণা দিবেন। এটি করা হলে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা বদলে যাবে। কর্মসংস্থান তৈরি হবে। লক্ষ লক্ষ হেক্টর জায়গা উদ্ধার হবে। খাদ্য ভান্ডার আরও সম্মৃদ্ধ হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল:
রংপুর উন্নয়নের দায়িত্ব ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন। রংপুর অঞ্চলে আর আগের মতো ক্ষৃধার হাহাকার নেই। দারিদ্রতার হারও কমে গেছে। কিন্তু সরকারী উদ্যোগে মিল, শিল্প কলকারখানা, কর্মসংস্থানের কোন সরকারী উদ্যোগে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সময়ের দাবি এখন একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের।
রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘এই সরকারের আমলে উন্নয়ন হয়েছে তাই প্রত্যাশাও বেশি। রংপুর জেলার ভিতরে ৬টি স্থলবন্দর রয়েছে। ইন্ডিয়া নেপাল, ভুটানসহ দেশগুলো থেকে সরাসরি পন্য আনয়ন করা যায়না। এখানে ট্যাগ করা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। দেশ একটি নীতিও একটি হওয়া উচিৎ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন এই ট্যাগটা তুলে দেয়া উচিৎ। যার যেদিক দিয়ে সুবিধা সেদিক দিয়ে আমদানী রপ্তানী করতে পারবে। আমাদের কৃষিভিত্তিক যে পন্যগুলো আছে সেগুলো ভারতের সেভেন সিস্টারসে রপ্তানী করতে পারি। এজন্য বারগুলো তুলে দিতে হবে। চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে এই বারগুলো নেই। বারগুলো তুলে দেয়া হলে ভারতের সাথে উত্তরাঞ্চলের আমদানী ও রপ্তানী বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি অনুন্নত জেলার মধ্যে ৬টি রংপুর বিভাগে রয়েছে। এজন্য এখানে আলাদা একটি শিল্পনীতি করা উচিৎ। যারা ঢাকার শিল্প কারখানা করবে তাদের ১০% আর যারা রংপুরে শিল্প কারখানা গড়ে তুলবে তাদের ব্যাংক থেকে ৪-৪.৫% ইন্টারেষ্টে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ। ৩-৫ বছর ভ্যাট ট্যাক্স মুক্ত করে দিলে বাংলাদেশের ইন্ডাসট্রিয়াল এখানে কলকারখানা গড়ে তুলবে, পার্শ্ববর্তী দেশে আমদানী রপ্তানী করবে। ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং সরকারের রেভিনিউ বৃদ্ধি পাবে।
রংপুরে কাগজ শিল্প, ফিড ফ্যাক্টরি, নদীর কাছে ট্যানারি শিল্প করা সম্ভব। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ, কোরবানী ঈদের গরুর চামড়া সংরক্ষণ করে বহিঃবিশ্বে রপ্তানী করতে পারি। এছাড়াও কৃষিভিত্তিক পন্যগুলো বিদেশে রপ্তানী করা যায়।রিংপুর বিভাগে গত এক দশকে আলু, কলা , পেপে, ভুট্টা, আম চাষে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। উধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে এসব সংরক্ষন করে বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে বলে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।
আধুনিক রেলষ্টেশন
রংপুর রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠার ৭৯ বছরেও চলছে মান্ধাতা আমলের কাঠামোতে, এখনও হয়নি এ-গ্রেডে উন্নীত। নানা সমস্যায় জর্জরিত বিভাগীয় শহরের এই রেলওয়ে স্টেশনটি। ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইন নির্মানের মাধ্যমে এই রেলওয়ে স্টেশন থেকে সারাদেশে যেমন যোগাযোগ ব্যব¯’ার উন্নতি ঘটবে তেমনি এখান থেকে বাড়বে সরকারের আয়।
প্রতিদিন এই রেল স্টেশন থেকে আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, বিরল কমিউটার, বুড়িমারী কমিউটার, দোলন চাঁপা এক্সপ্রেস, লোকাল এলআরসহ ৬ জোড়া ট্রেন বিভিন্ন ¯’ানে যাতায়াত করে। রংপুর ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ঢাকায় যাতায়াত করে। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে কুড়িগ্রামের চিলমারীগামী রমনা লোকাল ও শান্তাহার, পঞ্চগড়গামী সেভেন আপ এইট ডাউন মেইল। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন ¯’ানে চলাচল করেন।
রংপুরে প্রতিবছর রবিশস্য লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি উৎপাদন হ”েছ। ফলে অনেক সময়ই ক্ষেতেই নষ্ট হ”েছ কৃষকের স্বপ্নের ফসল। রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে ডুয়াল গেজ ও ডাবল লাইন সংযোজন করা হলে এখান থেকে সারাদেশে পৌঁছে যাবে রংপুরের ফসল। ফলে একদিকে যেমন শস্য বিনিময়ের মাধ্যমে ফসল বিক্রি করে কৃষকের আয় বাড়বে। অন্যদিকে অযাচিত মূল্য বৃদ্ধিও কমিয়ে আনা সম্ভব।
সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরূল আনাম বেঞ্জু বলেন, রংপুরের রেলষ্টেশনটি মান্ধাতা নিয়মেই চলছে। এখানে জরুরি ব্রডগেজ লাইন নির্মান করা জরুরী। রংপুরে আরো দুটি এসি রেল চালু করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও দুটি এসি সম্বলিত মালগাড়ি চালু হলে বাংলাদেশের ভিবিন্ন জেলায় পন্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হতো। এতে পন্যের সুষম ব্যবস্থা চালু হবে।’
রংপুর নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ:
২০১৪ সালের ৮ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভা হয়। সভায় রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করে স্বশাসিত সংস্থা গঠনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। সে সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের আলোকে টেকনিক্যাল কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রস্তাবিত রংপুর, সিলেট, বরিশাল—তিনটি কর্তৃপক্ষের আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন এবং এর কোনো কার্যক্রমের অগ্রগতি হয়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘একটি আধুনিক নগরের প্রথম শর্ত হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন। আমি মনে করি, রংপুর মহানগরকে উন্নত নাগরিক সুবিধা, তথ্য-প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। এর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া রংপুরকে উন্নয়নের স্রোতোধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব।’
চিনিকলগুলো পুনরায় চালুকরণ:
শ্যামপুর চিনিকল এম্পøয়েজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, রংপুর বিভাগে চারটি চিনিকল বন্ধ রয়েছে। যেটার সাথে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শ্রমিক, কর্মকর্তা, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ জড়িত। চিকিলগুলো বন্ধ থাকায় জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী রংপুর আসছেন। তার কাছে আমাদের প্রাণের দাবি বন্ধ চিনিকলগুলো খুলে দিয়ে আমাদের জীবন জীবিকা রক্ষায় সহযোগিতা করবেন। আমরা এতোমধ্যেই বাণিজ্যমন্ত্রী, ডিসির মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছি দাবি আদায়ের জন্য।
রংপুর আখ চাষী কল্যান সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক জানান, শ্যামপুরে একমাত্র আখ ছাড়া অন্য কোন চাষাবাদ জমিতে সেভাবে ফলে না। মিল বন্ধ থাকায় আমরা আখ চাষ করতে পারছি না। আমার খেয়ে না খেয়ে জীব যাপন করছি।প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি যেন শ্যামপুর চিনিকলটা খুলে দেন।
শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধার:
রংপুর মহানগরীর ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খাল খনন যত বিলম্ব হবে, ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বিভাগীয় নগরী রংপুরের ভবিষ্যত। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে শ্যামাসুন্দরী প্রকল্পের বাস্তবায়নের ঘোষণা চান সিটি মেয়র।
রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, বাজেট বৈষম্যের কারণে রংপুরের মানুষের যে প্রত্যাশা সেটি আমরা পূরণ করতে পারি না। ৭৪ বর্গ কিলোমিটারের রাজশাহী সিটিতে ৫ বছরে বরাদ্দ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। আর ২০৫ কিলোমিটারের রংপুর সিটিতে বরাদ্দ একই সময়ে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। সেকারণে আমরা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না।
শ্যামাসুন্দরী খাল এখন রংপুরের মানুষের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। এই খালটিকে যদি খনন করে বাঁচানো না যায়, তাহলে রংপুরের ভবিষ্যত খুব শোচনীয় হয়ে যাবে। এজন্য ৯৬১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আমরা সাবমিট করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশা তিনি শ্যামাসুন্দরীর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষনা দিয়ে রংপুর মহানগরীর উন্নয়নের নার্ভকে প্রবাহমান করবেন।
লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালুকরন:
২০১৯ সালের ১৩ মার্চ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এরপর বিমান বাহিনীর প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন এবং এর সম্ভব্যতা যাচাই করেন। এরপর সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরে সভা করেন তিনি। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি প্রথমদিকে বিমান কারখানা হিসেবে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারখানা করার পর যাত্রী পরিবহনের জন্য চালু হবে ফ্লাইট।
এদিকে লালমনিরহাট বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছেন। দেশে এই প্রথম একটি এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে এয়ারক্র্যাফট নির্মাণ, মেরামত, স্যাটেলাইট নির্মাণ, উৎক্ষেপণ, মহাকাশ গবেষণা প্রভৃতি প্রযুক্তির বিষয়ে গবেষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দরটি চালু হলে নেপাল, ভুটান ও ভারতের অন্তত ১৩টি অঙ্গরাজ্যের সব শ্রেণির মানুষ অনায়াসে কম খরচে বাংলাদেশে আসতে পারবে, তেমনিভাবে বাংলাদেশিরাও ভারত, নেপাল ও ভুটানে অল্প খরচে গিয়ে সব কাজ করতে পারবে। এছাড়া লালমনিরহাটের বুড়িমারি স্থলবন্দর, কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
চিলমারী নৌবন্দর আধুনিকায়ন:
২০১৬ সালের ৭ সেপ্টম্বর চিলমারী এক জনসভায় স্থানীয়দের দাবির মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়া চিলমারী উপজেলার চিলমারী নৌ-বন্দুরটি পুণরায় চালুর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক সে বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বন্দর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। এর ৫ বছর পর ২০২১ সালের ৮ জুলাই একনেক বৈঠকে বন্দর চালুর অনুমোদন মেলে। প্রকল্প অনুমোদন করা হয় ২শ ৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু দীর্ঘ এই ৭ বছরে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহন শেষ না হওয়ায় এখনও শুরু হয়নি উন্নয়ন কাজ।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চিলমারী নৌ-বন্দরের উন্নয়ন ও আর্ন্তজাতিক মানের বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে ১১ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত অন্যান্য পদক্ষেপ শেষে এখন শুধু জমির মালিকদের যে পাওনা সেটা দিলেই রেজিষ্ট্রি মূলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হবে। জমি হস্তান্তর হলেই নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করা হবে।
রংপুর বিভাগের উন্নয়নের স্বার্থে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে দ্রুত স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের পাশাপাশি এ অঞ্চলের জন্য আলাদা শিল্প ও ঋণনীতি, ভ্যাট ও কর নীতি প্রণয়ন, আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে রংপুরে প্রস্তাবিত হাইটেক পার্ক দ্রুত স্থাপন, পঞ্চগড় চা নিলাম কেন্দ্র দ্রুত স্থাপন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য জামানত বিহীন ঋণের ব্যবস্থাকরণ, বুড়িমারী ও বাংলাবান্দা স্থলবন্দকে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরে রূপান্তর, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দ্রুত রূপান্তর, ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যবস্থা সহজীকরণ, রংপুর বিভাগে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আগ্রহী করতে থোক বরাদ্দ প্রদান, রংপুর বিভাগে শিল্পের অনুকুল পরিবেশ তৈরি, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, অঞ্চল ও জেলা ভিত্তিক শিল্পায়নের উদ্যোগ গ্রহণ, দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে কারিগরি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনসহ, ট্যাক্স হলিডের মেয়াদ বৃদ্ধি এখন যেন প্রাণের রংপুরের মানুষের।