জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকা মানুষজন ঈদুল আযহা পালনে রাজধানী ছেড়েছে। ঢাকা ছাড়েন এক কোটির বেশি মানুষ। ফলে রাজধানীর পুরো চিত্র পাল্টে যায়। রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা।
ঈদের ছুটির প্রভাবে রাজধানীর অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলো এখন প্রায় ফাঁকা। রাস্তায় গণপরিবহন নেই বললেই চলে। নেই চিরচেনা যানজট। পুরো সড়কজুড়ে ব্যক্তিগত কিছু যানবাহ ও রিকশার আনাগোনা দেখা যায়। রাজধানীর অনেক বাসিন্দা ফাঁকা শহর ঘুরে ঘুরে উপভোগ করছেন। বাতাসের মধ্যেও পাওয়া যায় স্বস্তির নিঃশ্বাস।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বাংলামোটর, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর রোড, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, বিজয়সরণি ও মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা মেলে এমন চিত্র। রাজধানীবাসী বলছেন, এই ছুটি রাজধানীতে থাকা মানুষের জন্য এক আশীর্বাদ। থাকে না যানজট, শব্দদূষণ, কোলাহল বা বিষাক্ত বায়ু। ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে চলা যায় কোনও ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই।
ঢাকার সড়কে গাড়ির চাপ কম থাকায় অনেকটা স্বস্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। সায়েন্সল্যাব এলাকায় কথা হয় ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মাহবুব আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবেই ঢাকায় মানুষের সংখ্যা কমে যায়। ফলে সড়ক অনেকটাই ফাঁকা থাকে। তবে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা করা হচ্ছে।
আসাদগেট এলাকায় কথা হয় সার্জেন্ট রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির সময় রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমে যায়। ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। তবে অনেকে ফাঁকা ঢাকায় আইন অমান্য করে অতিরিক্ত গতিতে মোটরবাইক ও গাড়ি চালান। এছাড়া ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ার শঙ্কা থাকে। সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। যেকোনও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পশু কোরবানি করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সোমবার (১৭ জুন) কসাই না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে যারা ফরজ এই ইবাদত পালন করতে পারেননি, তারাই আজ পশু কোরবানি দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) ফজরের নামাজের পর থেকেই এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরেজমিন রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, পুরান ঢাকা, ধূপখোলা ও গেন্ডারিয়া এলাকা ঘুরে পশু কোরবানি করতে দেখা গেছে। তবে এই সংখ্যা অনেক কম।
ঈদের দ্বিতীয় দিন কোরবানি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধিকাংশ কোরবানিদাতাই প্রথম দিন কসাই সংকটের কারণ উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকেই পারিবারিক ও প্রথাগত ঐতিহ্য ধরে রাখতেও দ্বিতীয় দিন কোরবানি করেন।
এদিকে, কোরবানির মাংস নিম্নআয়ের মানুষদের সংগ্রহ করা বিক্রি হয়ে থাকে রাজধানীর বিভিন্ন ভাসমান বাজারে। আর এসব মাংস কিনে নেন কোরবানি দিতে না পারা খেটে খাওয়া মানুষরা। কিন্তু এবার সংগ্রহ করা মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এদিকে ঈদে একদিনের কসাইদের গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।
স্বল্প আয় আর মূল্যস্ফীতির চাপে মলিন সুজন-শাহিনুর দম্পতির জীবন। রিকশা চালিয়ে দিনের আয় ১৩০ টাকা আর আগের সঞ্চয় মিলিয়ে কিনেছেন ভাসমান বাজারে কোরবানির মাংস।
তারা বলেন, দোকান থেকে মাংস কিনার ক্ষমতা নাই। অনেক দাম নেয়। তাই এখান থাইকা কিনি। বছরে দুই একটা দিন ভালো মন্দ খাই।