উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অন্তত এক ডজন দেশে ভাইরাসজনিত বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশ। এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি বন্দরে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বিশেষ করে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ওপর সজাগ দৃষ্টিসহ স্ক্রিনিং জোরদার করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বিমানবন্দরে এ সংক্রান্ত কোনো রোগী সনাক্ত হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও কৌতুল সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ডাক্তাররাও মাঙ্কিপক্স নিয়ে জানার চেষ্টা করছেন।
নতুন এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, মাঙ্কিপক্স নিয়ে বলা মুশকিল। যেহেতু আমরা জানি না। মিডিয়াতে আসছে তাই দেখছি। এটা আমাদের রিসার্চ পর্যায়ে রয়েছে। আসলে কারোই কোনো ধারণা নাই। অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশেও আসতে পারে।
তিনি বলেন, এখন কত দেশ থেকে কত লোকজন আসে। কেউ ভাইরাস বহন করে আনলে হতেই পারে। মাঙ্কিপক্সে এখনো ঝুঁকি আছে বলে মনে হয়। তবে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। আইসোলেট করতে হবে।
মাঙ্কিপক্সের ভয়াবহতা নিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, রোগটা সিরিয়াস না। কেউ এখনো মারা যায়নি। ভবিষ্যতে কি হবে যেহেতু এটা গবেষণার পর্যায়ে আছে আগামী কিছুদিনের মধ্যে এটা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আমরা জানতে পারবো।
এ ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, এটার কোনো টিকা নাই। কোনো ওষুধও নাই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে গুটি বসন্তের (স্মলপক্স) যে টিকা এটা যদি দেয়া যায় তাহলে ৮০ বা ৮৫ ভাগ প্রটেকশন দিতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, প্রায় ৮০ জনের মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ১১টি দেশে আরও ৫০ জনের এই ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে।
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ রোগে আক্রান্তদের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা যায়। মাঙ্কিপক্সের নিশ্চিত রোগী পাওয়া গেছে- এমন দেশে সম্প্রতি যারা ভ্রমণ করেছেন, অথবা এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যাদের একই রকম ফুসকুড়ি দেখা গেলে বা নিশ্চিত বা সন্দেহজনক মাঙ্কিপক্সের রোগী হিসেবে শনাক্ত হলে, সেই রোগীদের মাঙ্কিপক্সের সন্দেহজনক রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সন্দেহজনক এবং লক্ষণযুক্ত রোগীদের কাছের সরকারি হাসপাতাল বা ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের ব্যক্তির তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং আইইডিসিআরে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রলিয়া এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছে। সর্বপ্রথম বানরের দেহে শনাক্ত হওয়া এ রোগটি এর আগে আফ্রিকার বাইরে দেখা যায়নি।