রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নির্বাচন আয়োজনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে: উপদেষ্টা নাহিদ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এমন দেশ গড়তে চাই, যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায় : প্রধান উপদেষ্টা ময়মনসিংহে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ‘আওয়ামী লীগ বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে’ বিএনপি জামায়াতের আধিপত্য কায়েম চলবে না: নুর এই আন্দোলনের একমাত্র মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান : দুদু ‘শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হচ্ছে দুর্গাপূজা’ মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টি হচ্ছে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা নিকারাগুয়ার নতুনভাবে প্রস্তুত হচ্ছে হিজবুল্লাহ বার্সেলোনার বিরুদ্ধে আগুয়েরোর মামলা বসনিয়া জয় জার্মানির, হাঙ্গেরিতে আটকে নেদারল্যান্ডস

বাংলাদেশ যাতে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রস্তুত থাকুন : প্রধানমন্ত্রী

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০২২
বাংলাদেশ যাতে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রস্তুত থাকুন : প্রধানমন্ত্রী

দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশ যাতে কখনোই দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যের অপ্রতুলতার মতো কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ আমাদের মাটি ও মানুষ আছে। তাই এখন থেকেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, বাংলাদেশ যাতে কখনো দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকটে না পড়ে। আমরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারিতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এতে বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে। ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের ডিজেল, এলএনজি ও সার কিনতে হয়। তাই নিজেদের পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আলোচনা করে চুক্তি করেছি। যেমন- কানাডা থেকে গম আনতে পারব। রাশিয়া-ইউক্রেন থেকেও এখন পণ্য আনতে পারব।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, লন্ডনে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। সেখানে সবার ভেতরে উদ্বেগ দেখা গেছে। ২০২৩ সালে খাদ্যমন্দা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে যেন এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি না হয়।

তিনি বলেন, এ যুদ্ধ শিগগির থামবে বলে মনে হয় না। করোনাকালে অস্ত্র বিক্রি করতে পারেনি উৎপাদকারী দেশগুলো। ফলে সেসময় লোকসান গুনেছে তারা। এখন যুদ্ধ চললে অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে দেশগুলো।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে শারমিন আক্তার বিজয়ীদের পক্ষে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাফল্য ও এর কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের ডিজেল, এলএনজি, সার, ভোজ্য তেল, গমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির বাস্তবতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেইক্ষেত্রে আমি অনুরোধ করবো যে আমাদের নিজেদের পণ্য উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, পাশাপাশি আমরা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায় কিছু উদ্যোগ নিয়েছি এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে আমরা এখন কিনে আনতে পারবো।’

তিনি উদাহারণ হিসেবে বলেন, যেমন কানাডার থেকে যাতে আমরা গম ও সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাশিয়া অথবা ইউক্রেন এবং বেলারুশ থেকে আমরা সব পণ্য এখন আনতে পারবো। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের চ্যাম্পিয়ন গ্রুপে রয়েছি বলে এটা করতে পারছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের দাম যেমন বেড়েছে পরিবহনের খরচও কিন্তু অতিরিক্ত বেড়েছে। তারপরও কৃষকদের ভর্তুকি কিন্তু আমরা অব্যাহত রেখেছি। কারন আমার দেশের মানুষের খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা আমাদের পূরন করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে আমরা কখনো আমদানি নির্ভর হবো না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবো।

রপ্তানী পন্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সেদিকে ব্যবস্থা নেয়ার এবং গবেষণা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এক্ষেত্রে তিনি দেশীয় বিজ্ঞানীদের জুট জেনোম আবিস্কারের প্রসঙ্গ টেনে পাট পণ্যের বহুমুখীকরণ করে রপ্তানী বৃদ্ধিতে সরকারের পাশাপাশি এখন বেসরকারি খাতও এগিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা থাকলেও সংরক্ষণ করা যেতনা বলে এক সময় আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু এখন আমরা এটি উৎপাদনে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছি এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছি। এই উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণেরও যেন ব্যবস্থা হয় সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি এবং বেসরকারি খাতকেও আমরা উৎসাহিত করছি।

তিনি বলেন, ‘শুধু উৎটপাদন করলে হবেনা সেগুলো যেন সংরক্ষণ করতে পারি সে ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে’।

ভোজ্যে লে আমাদের আমদানী নির্ভর হয়ে যাওয়ায় দেশে কিভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো যায় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের প্রধানমন্ত্রী নজর দিতে বলেন। অতীতে স্থানীয় পর্যায়ে চিনা বাদামের তেল উৎপাদনেরও উদাহারণ দেন তিনি, যা বর্তমানে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা গবেষণার মাধ্যমে উন্নত মানের সরিষা বীজ আমরা পেয়েছি। এছাড়াও অন্যান্য যে তেল আন্তর্জাতিক ভাবে অনেকে ব্যবহার করে যেমন সূর্যমূখী, সয়াবিন তা দেশীয়ভাবে উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর মত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এটা আমরা করতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি’।

যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে যেন কৃষি জমি নষ্ট না হয় সেজন্য সারাদেশে ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (শিল্পাঞ্চল) প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে আমার একটা লক্ষ্য আছে যে যে অঞ্চলে আমাদের যেসব কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয় সেই উৎপাদন বৃদ্ধি করে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সেসব অঞ্চলে আমরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারি। ফলে দেশে এগুলোর যেমন ব্যবহার হবে, বিদেশেও রপ্তানী করা যেতে পারে।

তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষি মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এই উৎপাদিত পণ্যগুলোর সংরক্ষণের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি পণ্য পচনশীল। এটা গাছ থেকে তোলার পর বেশিদিন থাকেনা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কৃষি পণ্য সংরক্ষণ করতে হবে। কোন কৃষি পণ্য কতটা তাপমাত্রায় ভাল থাকবে সেইভাবে সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে হবে। যাতে উৎপাদিত ফসল বাজারজাতের পাশাপাশি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। তাহলে নিজেরা ব্যবহারের পাশাপাশি রপ্তানীও করতে পারবো।

দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের পাশাপাশি পণ্য সংরক্ষণাগার তৈরীর সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা তৈরী করার জন্য যে ফান্ড লাগবে সে ফান্ড আমি দেব।’

এজন্য যে ফান্ড দরকার তা তিনি আলাদা করে রেখেছেন। ফলে একটু উদ্যোগ নিলেই এটি করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি সবাইকে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের কথাও অনুষ্ঠানে পুণরায় স্মরণ করিয়ে দেন।


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ