জোটের কার্যকারিতা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা অব্যাহত রাখছে দলটি।
বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময় জামায়াত ছাড়ার কথা বললেও জামায়াতের পক্ষ থেকে কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। এই প্রথম দলের শীর্ষ ব্যাক্তি দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান ঘরোয়া একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে জোটের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
জামায়াতের আমিরের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
ভিডিওতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটা আর ফিরে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর পর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না। এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছেন, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এই জোটকে কার্যকর করার কোনো চিন্তা নাই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর উপর ভর করে পথ চলা। তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সঙ্গে তারা ঐক্যমত পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো। যদি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন তবে আমাদের আগামী দিনগুলোতে কঠিন প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দোয়া করেন, এ সকল ত্যাগ যেন আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করে। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে।’
শরীয়াহ আইন মানেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া এই বক্তব্যেরও তীব্র সমালোচনাও করেন তিনি।
১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, প্রথমত, জামায়াতকে ছাড়তে পারলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি প্রধান প্রতিবেশী ভারতেরও সমর্থন পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, জামায়াত পাশে না থাকলে উদার ও বামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা যাবে। তৃতীয়ত, ‘জামায়াত-বিএনপি বা খালেদা-নিজামী’ বলে জনমনে সৃষ্ট নেতিবাচক পাবলিক পারসেপশনও এতে দূর হবে বলে মনে করছে বিএনপি।
দলটির নেতাদের মতে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের পর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সৃষ্ট নতুন পরিস্থিতি থেকেও বিএনপির ‘লাভ’ নেওয়ার সুযোগ আছে। কারণ ওই ঘটনার পরে ডানপন্থী তথা ইসলামপন্থী শক্তির উত্থানের আশঙ্কায় এ অঞ্চলের দেশগুলো নতুন করে হিসাব-নিকাশ কষছে বলে বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনা আছে।
ফলে ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার কূটনৈতিক কৌশল নিয়ে অগ্রসর হতে চাইছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলার কারণেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। তাই জামায়াতকে এখনই দূরে রেখে বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি বলে বিএনপির উদারপন্থী নেতারা মনে করেন।
তাঁদের মতে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত কঠিন, যদিও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারসহ দু-একজন নেতা এর বিরোধিতা করছেন। কিন্তু দলটির মধ্যে দক্ষিণপন্থী নেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদারপন্থীদের মতামতই গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে।