চলতি মৌসুমের হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত বিমান ভাড়াকে অযৌক্তিক দাবি করে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমিয়ে হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
রোববার হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের বক্তব্যে হাব সভাপতি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধর্ম বিষয়ক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরাম (আরআরএফ) ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি হোটেলে ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এ সেমিনারের আয়োজন করে।
আরআরএফ সভাপতি উবায়দুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।আরআরএফ সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু’র সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন হাব মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার, আরআরএফ’র সাবেক সভাপতি ফয়েজউল্লাহ ভূঁইয়া। এতে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সহ-সভাপতি রাশিদুল হাসান।
‘অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের আবেদন’ শিরোনামে লেখা চিঠিতে বলা হয়, যেসব হজযাত্রী ২০২৩ সালে হজ করবেন তাদের অধিকাংশই ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রাক-নিবন্ধিত হয়ে তখনকার করা আর্থিক বাজেটে হজে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। কিন্তু হজযাত্রীদের অতিরিক্ত বিমান ভাড়াসহ হজের খরচ বাড়ায় এরই মধ্যে হজযাত্রীসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এ বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ১,৯৭,৭৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বাস্তবতার নিরিখে অনেক বেশি এবং অযৌক্তিক। এ কারণে ঘোষিত হজ প্যাকেজ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হয়নি এবং সমালোচিত হয়েছে। যেহেতু বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ফলে তাদের একক কর্তৃত্বে ভাড়া নির্ধারণ যথার্থ হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ১.৪০ লাখ টাকা। মূলত করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি এবং করোনার কারণে বিমানের কিছু আসন খালি রেখে ফ্লাইট পরিচালনার কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। তবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের প্রত্যাশা ছিল করোনা-পরবর্তী বিমান ভাড়া কমতে পারে।
‘বর্তমানে জেট ফুয়েলের দাম বাড়েনি, সৌদি আরব কোনো নতুন চার্জ আরোপ করেনি, বিমানের খালি আসন রেখেও হজযাত্রী পরিবহন করতে হবে না। অথচ হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। যা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অযৌক্তিক মনে করেন এবং তাদের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমিয়ে হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণ করতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
হাব সভাপতি চিঠিতে আরও লিখেন, বাংলাদেশের হজযাত্রীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া সব পদক্ষেপই সর্বমহলে বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে প্রশংসিত ও সমাদৃত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দিকনির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা সৌদি সরকারের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, হাব সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। পবিত্র হজ বাংলাদেশের মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতিতে নিবিড়ভাবে জড়িত। বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভীষণভাবে স্পর্শকাতরও। শুধু হজযাত্রীরা নয়, দেশের সব মুসলিম নাগরিক হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতি ভালো বলে মন্তব্য করে, প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে হজ প্যাকেজ মূল্য বেড়েছে।ডলার ও রিয়ালের বিনিময় মূল্যে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।”
বিশেষ কমিটি গঠনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফরিদুল হক খান বলেন, ‘নির্ধারিত ফ্লাইট বিবেচনায় বিমান ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ আছে। তবে বিতর্ক এড়িয়ে বিমান ভাড়া নির্ধারণে ভবিষ্যেতে কোন স্থায়ী কাঠামোর কথা ভেবে দেখা যায়। এ ব্যাপারে পরবর্তী হজের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
হজযাত্রী নিবন্ধণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১,১৮,৩৫১ জন নিবন্ধিত হয়েছেন।আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় রয়েছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকিগুলোও নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
মূল প্রবন্ধে রাশিদুল হাসান বলেন, এবার সব দেশে তুলনামূলকভাবে হজের খরচ বৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশের হজযাত্রীদের খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে ৩,৪৭,৩৪৭ টাকা খরচ করতে হবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। মালয়েশিয়ায় যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৯৬,০০০ টাকার কম, সেসব পরিবারের সদস্যদের জন্য হজের খরচ ধরা হয়েছে ২,১৮,৭৫৪ টাকা। মাসিক আয় বেশি হলে দিতে হবে ২,৫৮,৬০০ টাকা। দেশটিতে হজের জন্য সরকার বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টদের আশংকা, এ বছর কোনো মতে ১.২০ লাখ পর্যন্ত হাজী পাওয়া গেলেও আগামী বছর ৫০ হাজার হাজীও রেজিষ্ট্রেশন করবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এ বছরতো বিগত ৩ বছরে জমে থাকা যাত্রীদের মধ্য থেকে টেনেটুনে এ কোটা পুরন করা সম্ভব হয়েছে। এখন আর পুরানো কোনো হাজি নেই। অর্থ্যাৎ রেজিষ্ট্রেশনের উদ্ধৃত কোনো যাত্রী জমা নেই। তাহলে এত বেশি টাকা অব্যহত থাকলে আগামী বছরগুলোতে তেমন কোনো হাজী পাওয়া যাবে না। এতে করে এ বছর কোটা পুরণ করতে ব্যর্থ হলে আগামী বছরগুলোতে সৌদি সরকারও বাংলাদেশের জন্য কোটা সীমিত করে দিতে পারে বলে আশংকা করছেন হাব ও সংশ্লিষ্টরা। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, তার দাবি।