কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে আমদানি করা প্রায় ৫০০ মালবাহী ওয়াগন পড়ে আছে চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে। সম্প্রতি ৬০টি ওয়াগন খাদ্যশস্য পরিবহনে ব্যবহৃত হলেও বাকী ওয়াগন খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। ট্রেনে খাদ্যশস্য ও পাথর পরিবহন কম হলেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে ওয়াগন কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রেল লাইনের বুক জুড়ে অলস পড়ে আছে হলুদ ও লাল বর্ণের সারি সারি ওয়াগন। এক বছর আগে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে এসব মিটারগেজ ওয়াগন আমদানি করে রেলওয়ে । ৫৮০টি ওয়াগনের মধ্যে ৩৮৬টি খাদ্যশস্য ও ১৭৪টা পাথর পরিবহনের জন্য। এর মধ্যে ৬০টি খাদ্য শস্যবাহী ওয়াগন চলতি মাসে সরকারি গুদামে গম পরিবহনে নিযুক্ত করা হয়। বাকিগুলো চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। এরই মধ্যে চুরি হয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান ব্যাটারিও।
৩০টি ওয়াগন মিলে চলে একটি খাদ্য শস্যের ট্রেন। প্রতি ট্রেনে রেলের আয় প্রায় সাত লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ৩৮৬টি ওয়াগন দিয়ে দৈনিক কমপক্ষে ১০টি ট্রেন চললেও বছরে রেলের বাড়তি আয় হতো ২৫৫ কোটি টাকা। তবে কেনো এসব ওয়াগন পড়ে আছে? এই বিষয়ে জানার জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে গেলেও কথা বলতে রাজি হননি তিনি। জানান, খাদ্য বিভাগের চাহিদা না থাকায় এগুলো চলছে না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা ডিমান্ড দেবে, তারাই সব করবে। এখন দেখা গেছে সরকারি খাদ্যশস্য, তারপর বিপিসি মানে তেল যারা ক্যারি করে, তাদের ডিমান্ড দেয়। আমরা সে অনুযায়ী পরিচালনা করি। সরকারি খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে যদি ডিমান্ড না প্লেস করে তাহলে তো বসে থাকবে। আর যখন ডিমান্ড দেবে আমরা কিন্তু সাথে সাথে গন্তব্যে পৌঁছে দেবো।’
চাহিদা না থাকলেও এসব ওয়াগন কেনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয় এসব ওয়াগনের গায়ে ধারণক্ষমতা লেখা আছে ৪৬ মেট্রিকটন। কিন্তু বাস্তবে এগুলো পরিবহন করতে পারে মাত্র ৩১ মেট্রিকটন। অর্থাৎ এখানেও হয়েছে বড় ধরনের দুর্নীতি।
একইভাবে রেলপথে পাথর পরিবহন দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকলেও কেনা হয়েছে ১৭৪টি খোলা ওয়াগন। লাল রঙা এসব ওয়াগনও এক বছর ধরে ইয়ার্ডে পড়ে আছে। এসব ওয়াগন থেকে কোন আয় না হলেও চিটাগাং গুটস পোর্ট ইয়ার্ডের সচল লাইন দখল করে আছে। ফলে ট্রেন অপারেশন, বগি সংযোজন ও বিয়োজনে সমস্যা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেন রিসিভ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডের ইয়ার্ড মাস্টার মো আব্দুল মালেক বলেন, ‘এই ওয়াগনগুলো আমার এখানে ছাড়া আর কোথাও রাখা যাবে না। এটা হচ্ছে বড় ডিপো। আমরা বিভিন্নভাবে বেকায়দায় পড়ে যাই, কিন্তু কাজ চালা হয়, আমরা চালিয়ে নেই।’
বিশিষ্টজনরা বলছেন, রেল সম্ভাবনার একটি বড় খাত হলেও কেনাকাটা ও প্রকল্প গ্রহণে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে লাভের মুখ দেখছে না রেল ।
চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘এটা সম্ভাবনাময় একটা বিশাল খাত। সেখানে সমস্যা যেটা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার মনিটরিং অথরিটি, তাদের দুর্নীতি পরায়ণতা, দুর্বলতা এবং অদক্ষতার কারণে পিছিয়ে আছে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য পরিবহন করে রেলওয়ের আয় ১৫৩ কোটি টাকা। যদিও সদ্য শেষ হওয়া ২৩-২৪ অর্থ বছরে রেল আয় করেছে ১৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা । এ খাতে গেল বছরের চেয়ে আয় কমেছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।