মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বসুন্ধরার চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ শেখ হাসিনা সবকিছু ধ্বংস করে ফেলেছে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের হাই কমিশনে হামলা: ত্রিপুরার ৩ পুলিশ বরখাস্ত সীমান্তে যেকোনো অপতৎপরতা রোধে প্রস্তুত বিজিবি সেনাসদস্যদের দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বললেন সেনাপ্রধান ‘আগরতলার ঘটনা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ’ ‘পায়ে পড়ে ঝগড়া করলে বাংলাদেশের মানুষ ভারতমুখী হবে না’ দুর্নীতির শীর্ষে পাসপোর্ট-বিআরটিএ-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ‘বাংলাদেশে নয়, ভারতেই শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার’ চিন্ময়ের জামিন শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন ধার্য ঘূর্ণিঝড় ফিনজালে ভারত-শ্রীলঙ্কায় নিহত ২০ সিরিয়ায় ঢুকেছে ইরান-সমর্থিত ইরাকি যোদ্ধারা গাজায় আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত যুদ্ধবিরতির মধ্যেই লেবাননে হামলা চালাল ইসরায়েল, নিহত ১১ জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প

ব্যাংক খাতের আমানত এখন চ্যালেঞ্জের মুখে

বৃত্তান্ত প্রতিবেদন
আপডেট : মে ৯, ২০২৩

ব্যাংক খাতের আমানত এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত ডিসেম্বরেও আমানত হ্রাস পেয়েছে। আগের মাসের তুলনায় ব্যাংকগুলোতে কমেছে ফিক্সড ডিপোজিট বা মেয়াদি আমানত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, নভেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মেয়াদি আমানত ছিল ১৩ লাখ ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকায় নেমে আসে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

আমানত প্রবাহ কমে যাওয়ায় তারল্য সংকটে পড়েছে অনেক ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে নিজেদের বিনিয়োগ কমিয়ে এনেছে। যেসব বিল-বন্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে সেগুলো নবায়ন করেনি। আবার মেয়াদ পূর্ণ হয়নি এমন অনেক বিল-বন্ডও ব্যাংকগুলো নগদায়ন করে ফেলেছে। গত নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ কমেছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি তৈরি হওয়ায় অনেকে ব্যাংকে থাকা নিজেদের সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। এছাড়া উচ্চমূল্যস্ফীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দার কারণেও কমে গেছে। জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষের হাতে সঞ্চয় থাকছে না। যেকারণে ব্যাংকের মেয়াদি আমানত কমে গেছে।

মেয়াদি আমানত হচ্ছে ব্যাংকের তহবিল সংগ্রহের প্রধান উৎস; মোট আমানতের ৮৮ শতাংশই সংগ্রহ হয় এখান থেকে। গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগৃহীত এ অর্থ হচ্ছে ঋণ বিতরণের চালিকা শক্তি। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা ডিমান্ড বা তলবি আমানত। বাকি ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা বিভিন্ন মেয়াদের। এ ধরনের আমানতের সর্বনিম্ন মেয়াদ তিন মাস। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের শেষ মাস তথা ডিসেম্বরে মেয়াদি আমানতের পরিমাণ ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা কমে গেছে। তবে এ সময়ে তলবি আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে থাকা (তলবি আমানত) অর্থ তলবি আমানত নামে পরিচিত।

২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানত ছিল ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সে হিসেবে এক বছরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৭৯ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে একই বছর আমানতের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণপ্রবাহে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গি এবি মীর্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘২০২২ সাল বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি বিভিন্নমুখী সংকটের মধ্য দিয়ে পার করেছে। সংকটগুলোর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যাংক খাতের আমানতের ওপরও। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। আবার উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের হাতে সঞ্চয় করার মতো অর্থ থাকছে না। সব মিলিয়ে ব্যাংকে মেয়াদি আমানত কমে যাওয়া অর্থনৈতিক সংকটেরই বহিঃপ্রকাশ।’

তিনি বলেন, গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থের সুরক্ষা দিতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের ১৩ শতাংশ বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে হয়। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এসএলআরের হার সাড়ে ৫ শতাংশ। এটি সংরক্ষণ করতে হয় সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড কেনার মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করে সুকুকসহ ইসলামী বন্ডে। নগদ তারল্য বেশি হলে ব্যাংকগুলো এসএলআরের নির্দিষ্ট হারের চেয়েও বেশি অর্থ ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তারল্য সংকটের কারণে গত এক বছরে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ৪১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা কমে গেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৭ কোটি টাকায়।

তিনি আরো বলেন, গ্রাহক নিজস্ব প্রয়োজনে গত বছর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এত পরিমাণ নগদ অর্থ আগে কখনো ব্যাংকের বাইরে ছিল না। করোনা মহামারীর সময়েও ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ২৭ শতাংশেরও বেশি।


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ