বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানসমূহকে ভাসানচরে রোহিঙ্গা বিষয়ক কাজে যুক্ত বিষয়ে আজ বাংলাদেশ সরকারের সাথে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর)সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ মোহসীন এবং জাতিসংঘের পক্ষে ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ এতে স্বাক্ষর করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী- জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ কক্সবাজারের ন্যায় ভাসানচরেও মানবিক সহায়তা পরিচালনা করবে। বেসামরিক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের যৌথ উদ্দ্যেগে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (এফডিএমএন)খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিস্কাশন, চিকিৎসা, মিয়ানমার কারিকুলাম ও নিজস্ব ভাষায় রোহিঙ্গাদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সরকার এখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ও কর্মরত জাতিসংঘ এবং এর সহযোগী সংস্থা ও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় দেখাশুনা করবে।
এছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের কারণে পাশ্ববর্তী স্থানীয় এলাকা ও জনগণের উপর যে প্রভাব পড়বে, তা নিরসনে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, বিগত ১৯৯১-৯২ সাল হতে ২৫ আগস্ট থেকে ২০১৭ এবং এর পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার হতে আগত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পাদন করছে।
জনসংখ্যার অতি ঘনবসতি ও পরিবেশের ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ভাসানচর কিংবা কক্সবাজারে তাদের থাকার ব্যবস্থা সাময়িক। সরকারের মূল লক্ষ্য মিয়ানমারের এ সকল বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসন। যত দ্রুত সম্ভব তাদের দেশে ফেরত পাঠানো।
তিনি জাতিসংঘের সংস্থাসমূহসহ অন্য দেশের সার্বিক সহায়তায় প্রত্যাবাসনের কাজ দ্রুত শুরু করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ২০১৮ সালে গঠিত কারিগরি ও সুরক্ষা বিষয়ক উপ-কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য ভাসানচরে ১৪৪০টি আশ্রয়গৃহ ও ১২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল তারিখ ৪,৭২৪ পরিবারের ১৮,৮৪৬ জন মিয়ানমার নাগরিককে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে আরও ৮১ হাজার মিয়ানমার নাগরিককে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে।
স্থানীয় এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও’র সহযোগিতায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের খাবার এবং অন্য খাদ্য বহির্ভূত দ্রব্যসামগ্রী দেওয়ার মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান।
তাজুল ইসলাম বলেন এ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে ।
ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সহজ হয়েছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।