কাল বাদে পরশু ষষ্ঠী। বৈরি আবহাওয়া এবং আর জি কর কাণ্ডের জেরে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পরিস্থিতি কিছুটা থমথমে হলেও তৃতীয়া ও চতুর্থীর দিনে পূজা মণ্ডপে দর্শণার্থীদের ভিড় ছিল ব্যাপক। শিল্পীদের মৌলিক ভাবনা ও অভিনব মণ্ডপ সজ্জার জন্য কলকাতার সুনাম ভারতজুড়ে।
কলকাতার বুকে এক টুকরো লাস ভেগাস। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের জনপ্রিয় লাস ভেগাস স্ফিয়ার অডিটোরিয়ামের আদলে মণ্ডপ গড়ে এবারও দর্শণার্থীদের মন জয় করেছে সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের পূজা উদযাপন কমিটি। আশ্চর্য এই আলোর গোলক দেখতে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকেও মধ্য কলকাতার মিত্র স্কয়ারে জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
২০২২ সালে লালকেল্লা, ২০২৩ এ রামমন্দির আর এবার, এবার ৮৯ তম বছরে বিলেত ফেরত লাস ভেগাস স্ফিয়ার। সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের দুর্গা পূজা কমিটির প্রধান সজল ঘোষ বলছেন, এবার ভিন্নধর্মী থিমে পূজা আয়োজন করলেও নানা আয়োজনের মাধ্যমে আর জি করের নির্যাতিতা নারীর চিকিৎসক হত্যার বিচার চেয়েছেন তারা।
আয়োজকরা বলছেন, এবারের মণ্ডপ সজ্জায় মিলেমিশে থাকবে প্রতিবাদের ভাষা। মাঠজুড়ে বিজ্ঞাপন বোর্ডেও থাকবে ধর্ষকদের শাস্তির দাবি।
পূজার উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পূজো কমিটির তরফ থেকে প্রতিবছর ১২০০ জন শিক্ষার্থীকে ১ হাজার রুপি করে বৃত্তি দেয়া হয়। এবার তা উৎসর্গ করা হয়েছে আর জি করের নিহত চিকিৎসকের নামে। তার বলছেন, পুজোয় থাকলেও, বিচারের দাবি ভুললে চলবে না।
ভারতীয় নৌবাহিনীতে পরীক্ষা দিতে মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও দিল্লি থেকে কলকাতা এসেছেন অনেক শিক্ষার্থী। একদিন হাতে থাকায় আগেভাগেই কলকাতার পূজা দেখতে বের হয়েছেন তারা। চমৎকার পরিবেশ ও শৈল্পিক আয়োজন দেখে রীতিমতো মুগ্ধ এই শিক্ষার্থীরা।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি শিয়ালদহতে উঠেছি। আশেপাশের পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখছি, ভীষণ ভাল লাগছে। বাইরে থেকে অনেক কম দর্শণার্থী আসেন। কিন্তু আপনাদের সবার এখানে আসা উচিৎ। কলকাতার দুর্গাপূজার আমেজই আলাদা।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ভাবলাম, হাতে যেহেতু একদিন সময় আছে, পূজা মণ্ডপগুলো থেকে ঘুরে আসি। এত ভালো সুযোগ পেয়েছি, ছাড়বো কেন!
পুরোহিতরা বলছেন, এবার বাপের বাড়িতে আসার সময় দুর্যোগ আর যুদ্ধ বিগ্রহের অশনি সংকেত নিয়ে এসেছেন মা দুর্গা। ফেরার সময়ও রেখে যাবেন বিপর্যয় আর সামাজিক অস্থিরতা। তবু, ভক্তদের নিরন্তর প্রার্থণায় মা দুর্গার আশীর্বাদেই সব সংকট পেড়িয়ে আসার সাহস পাবে মর্তের বাসিন্দারা। এমনটাই প্রত্যাশা সবার।