শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
‘যারা শহীদ হয়েছে তাদের রক্তে সাথে বেইমানি করা যাবে না’ নরেন্দ্র মোদী পুণ্যস্নান করলেন ত্রিবেণী সঙ্গমে ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে’ চার প্রদেশ ও নতুন দুই বিভাগের প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের অনির্বাচিত সরকার কখনো নিরাপদ না: জামায়াতের নায়েবে আমির আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল সরে দাঁড়িয়েছেন মেয়েদের জাতীয় দলের প্রধান কোচ থানায় হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হত্যা মামলায় শাহজাহান ওমরসহ তিনজন গ্রেপ্তার যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে গাজা উপত্যকা: ট্রাম্প সুইডেনে স্কুলে গুলি, নিহত ১০ তাপমাত্রার সাথে বাড়বে কুয়াশার দাপট উত্তরবঙ্গের সব পেট্রল পাম্প অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা সবাই খালাস

মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পাল্টাতে মরিয়া ইসরায়েল

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
আপডেট : ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
গাজায় ত্রাণের বহরে হামলার তদন্ত ও যুদ্ধবিরতির দাবি বিশ্ব নেতাদের

ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে এক বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধ থামাতে এখন পর্যন্ত কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ফর্মুলাই কাজে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় একদিকে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশেও নিজেদের মতো করে প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে ইসরায়েল।

সবশেষ সিরিয়ায় সরকার পতনের পর তেল আবিবের ব্যাপক হামলায় বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এ ছাড়া বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা করে। এরপর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এতে ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গত বছর এ যুদ্ধ শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এ বছর এটি ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে। ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি ও পশ্চিমা জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকে। এ বছরের শুরুতে হুতিদের ওপর একসঙ্গে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের নতুন মোড় নেয় চলতি বছরের এপ্রিলে। ওই সময় দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা হয়। এতে ইরানের সাত কর্মকর্তা নিহত হন। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে ইরান। এর জবাবে গত ১৩ এপ্রিল ইরান ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এটি ছিল ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ইরানের প্রথম সরাসরি আক্রমণ। এ সময় আমেরিকা জানায়, ইসরায়েলের প্রতি তাদের লৌহদৃঢ় সমর্থন থাকবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় যুদ্ধের শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। এর জবাবে ইরানেও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল।

এর পর উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে গত ২৭ জুলাই। ওই দিন ইসরায়েল অধিকৃত গোলান হাইটস অঞ্চলে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ১২ শিশুর মৃত্যু হয়। এ হামলার জন্য লেবাননভিত্তিক সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দায়ী করে ইসরায়েল। এর তিন দিন পর ইরানের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এর পরদিন ৩১ জুলাই খামেনি জানান, ইসরায়েল কঠোর শাস্তি পাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে।

চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননে হিজবুল্লাহ সদস্যদের লক্ষ্য করে পেজার হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত ১২ জন নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়।

এরপর লেবাননভিত্তিক শিয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। পাশাপাশি তারা লেবাননেও হামলা জোরদার করতে থাকে। জবাবে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। ওই দিনই লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। পাশাপাশি তারা তেহরানের হামলার প্রতিশোধমূলক হামলার পরিকল্পনা করে। তবে ইরানের তেল ও পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনায় সমর্থন দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

গত ১৮ অক্টোবর হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকের হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর তারা ইরানের তিনি সেনা ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়।

নভেম্বরে আস্থা না থাকায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টকে বরখাস্ত করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা যুদ্ধের লক্ষ্যগুলো কী, তা নিয়ে কয়েক মাস ধরে ডানপন্থী লিকুদ পার্টির অভ্যন্তরে গ্যালান্ট ও নেতানিয়াহুর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এরপরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এসব ঘটনার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলেও হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ থামিয়ে দেন নেতানিয়াহু।

ডিসেম্বরের শুরুর দিকে সিরিয়ায় বিদ্রোহী বাহিনী বাশার আল আসাদ এবং তাঁর শাসনের পতন ঘটায়। এতে ওই অঞ্চলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইরান ও লেবানন। এর মধ্যে ইসরায়েল সিরিয়ায় হামলা জোরদার করে। আইডিএফ সৈন্যরা বিতর্কিত গোলান মালভূমির সিরীয় অংশও দখল করে নেয়। নেতানিয়াহু বলেছেন, সীমান্তের অপর প্রান্তে নতুন বাহিনী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁর বাহিনী জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত বাফার জোনে থাকবে।

বিদায়ী বছরের শুরুতে মিডল ইস্ট মনিটরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ আভি লিপকিন বলেছিলেন, ‘পর্যায়ক্রমে ইসরায়েলের সীমান্ত লেবানন থেকে সৌদি আরবের বিশাল মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। পরে তা ভূমধ্যসাগর থেকে ফোরাত নদী; অর্থাৎ, ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।’

এ ছাড়া গত অক্টোবরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইসরায়েল: মিনিস্টারস অব কেওস’ নামের তথ্যচিত্রেও বৃহত্তর ইসরায়েলের কথা উঠে এসেছে। তথ্যচিত্রে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জানান, ভবিষ্যৎ ইসরায়েল রাষ্ট্র জর্ডান, লেবানন, মিশর, সিরিয়া, ইরাক, এমনকি সৌদি আরব পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ লেবাননে বসতি স্থাপনে ওই অঞ্চলের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে ইসরায়েলের একটি কট্টরপন্থী ইহুদিবাদী সংগঠন। মানচিত্রে অঞ্চলটির বিভিন্ন এলাকাকে হিব্রু নামে নামকরণ করা হয়, যার সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।

সবশেষ বৃহত্তর ইসরায়েল রাষ্ট্র নিয়ে কথা বলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে বলে জানান তিনি। এ সময় আইডিএফ একাধিক ফ্রন্টে বিজয় অর্জন করেছে বলেও দাবি করেন নেতানিয়াহু।

বৃহত্তর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা নতুন নয়। এ সম্পর্কিত প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৮৯৭ সালে। সে বছর সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে আধুনিক ইহুদিবাদের প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্জেলের নেতৃত্বে ইহুদিদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন হার্জেল। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, মিডল ইস্ট মনিটর


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ