একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে সারা বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেয়া কোনোভাবেই উচিত নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে রাশিয়ার ওপর আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া উচিৎ।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ৮ তলা অফিস ভবন উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন শুধু রাজনৈতিক না, আমাদের অর্থনৈতিক কূটনীতিতেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ পৃথিবীটা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
‘‘আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে যে, সকলের সঙ্গেই মিলে আমরা কাজ করব, যেন মানুষের উন্নতি হয়। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’’
বাংলাদেশের অবস্থানটা সবসময় শান্তির পক্ষে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সবসময় আমরা শান্তি চাই। জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ সেই নীতিটা যথাযথভাবে আমি মেনে চলি, আমাদের রাষ্ট্র মেনে চলে।’’
‘‘একটা বিষয় আমি একটু না বললে নয়, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। আমরা মানবিক কারণে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তিনটা বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য আসলে এটা একটা বিরাট বোঝা। একে তো এই করোনা ভাইরাস, তার ওপরে যুদ্ধ— এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে— সেখানে আমাদের এই সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের উপরে আরেকটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর তা সকলের উপলব্ধি করা উচিত।’’
তিনি বলেন, আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলো যদি আর একটু সক্রিয় হয়ে এই রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে সেটা দেখবেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন তাদের নিজের দেশে মানুষ হতে পারে, তারা একটা ভালো পরিবেশে চলে যেতে পারে, এভাবে ক্যাম্পের জীবনযাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সকলেই একটু সক্রিয় হবেন সেটাই আমি আশা করি।
কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো ছিল সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি বলে জানান সরকারপ্রধান।
যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে আটকে পরা বাংলাদেশিদের উদ্ধার কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করায় পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন আর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অবদান রাখায় ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি’কে দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’।
অনুষ্ঠানে ‘বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু কর্নার’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং বিদেশের সব বাংলাদেশ মিশনের জন্য অভিন্ন ওয়েবসাইট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ দুই রাষ্ট্রদূত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।