রিজার্ভ কমে আসার কারণে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির দায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর।
বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতিতে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষ ঠিক মতো খাবার পাচ্ছে না; অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানকে পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। আর সরকার এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করছে। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির দায় সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, মানুষ ঠিকভাবে খেতে পারছে না। ১২ হাজার টাকার অভাবে মা সন্তানকে বিক্রি করতে চাইছে। ৭৪’র দুর্ভিক্ষের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আর সবই হচ্ছে সরকারি দুর্নীতি-অপশাসনের কারণে। কারণ, এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরাই মূলত সরকার চালাচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের এমন প্রশ্ন অনেক বার শুনেছি, আপনার আন্দোলন বলতে আসলে কি বুঝান, এটা আমরা বুঝি না। আন্দোলন কি শুধু হরতাল, অবরোধ এই ধরনের বিষয়? এগুলো শুধু আন্দোলন নয়। মানুষকে আস্তে আস্তে তৈরি করে রাস্তায় নামামোটাই আন্দোলন। মানুষ যখন রাজপথ দখল করবে, তখনই আন্দোলন অর্থবহ হয়ে দাঁড়াবে।
আগামী ২৫ আগস্ট বাম দলের হরতালে বিএনপি সমর্থন দেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ন্যায়সঙ্গত দাবির আন্দোলনে আমরা সব সময় সমর্থন করি।
তিনি বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। এ সরকারের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই বিধায় তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী সরকারকে রাজপথের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে সত্যিকার অর্থে জনমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মহাসচিব বর্তমান নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র সবিস্তারে তুলে ধরে বলেন, ২০০৬ সালে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল গড়ে ১৫ টাকা। ২০২২ অর্থাৎ বর্তমানে মোটা চালের দাম গড়ে ৫৪ টাকা। মূল্যবৃদ্ধি ৩ গুণেরও বেশি। ২০০৬ সালে ১০০ টাকায় প্রায় ৭ কেজি মোটা চাল কেনা যেতো। বর্তমানে ১০০ টাকায় মোটা চাল কেনা যায় ২ কেজি। প্রায় ৫ কেজি কম চাল পাওয়া যায়। আয় সক্ষমতা যদি ২ গুণ বৃদ্ধি পায়। এরপরেও ২০০৬ সালের সমপরিমাণ ক্রয় সক্ষমতা অর্জন অসম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।