বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: সোমবার শেষ হয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিনদিনের পুলিশ রিমান্ড।
তিনদিনের রিমান্ডে পুলিশ তাদের ইভ্যালির অর্থ ও গ্রাহকের টাকার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা রিমান্ডে ইভ্যালির ব্যবসায়িক পলিসি নিয়ে ও অন্য কর্মকাণ্ড নিয়ে ‘চাঞ্চল্যকর’ কিছু তথ্যও দিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ইভ্যালির এমডি রাসেল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ‘তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। প্রতারণারও প্রশ্নই ওঠে না।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘গ্রাহক জেনে-বুঝেই ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডার করেছেন। যারা ডেলিভারি পাননি ভবিষ্যতে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ইভ্যালিতে প্রতারণার কোনো বিষয় নেই।’
এসব তথ্যের ভিত্তিতে ইভ্যালির কার্যক্রম নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে রাসেল দাবি করেছেন, ইভ্যালির প্রতিটি পণ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে শর্ত দেওয়া থাকে। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো- ‘স্টক থাকা পর্যন্ত’। অনেক সময় স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি। যাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি, তাদের টাকা রিফান্ড করেছেন। অনেকের রিফান্ড প্রক্রিয়াধীন, কিছুটা দেরি হলেও তারা টাকা পাবেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক ওহিদুল ইসলাম জানান, ‘অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করছি। আমরা বের করার চেষ্টা করছি, মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন কি-না। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলেছে, অনেক প্রশ্নের মেলেনি।’
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও রিমান্ড চাওয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিনিয়র কর্মকর্তারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন, রিমান্ড চাওয়া হবে কি-না।’
গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার যে অভিযোগ এসেছে, সেই অভিযোগের পরিপ্রিক্ষিতে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। পাশাপাশি ইভ্যালির বিজনেস পলিসি নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।’
ইভ্যালির গুরুত্বপূর্ণ সব পদেই রাসেলের স্ত্রীর স্বজনরা
গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের মামলা তদন্তে নেমে পুলিশ ইভ্যালি সম্পর্কে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে রাসেল তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের বাসিয়েছেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (টেকনিক্যাল) মামুনুর রশীদ। তিনি সম্পর্কে রাসেলের স্ত্রী শামীমার বোনের স্বামী। মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান শামীমার বোন সাবরিনা নাসরিন, পরিচালক (পারসেস অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) শামীমার বন্ধু আতিকুর রহমান। এছাড়া শামীমার দুই ভাগনে জাহেদ ও জুবায়ের মোটরসাইকেল বিক্রি সংক্রান্ত ডেলিভারির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতেন।
রাসেল-নাসরিনকে ৭ দিন রিমান্ডে চায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ
গুলশান থানার মামলায় রিমান্ডে থাকাকালীন ধানমন্ডি থানায় রাসেল-নাসরিন দম্পতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদী মো. কামরুল ইসলাম চকদার নামে এক গ্রাহক। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ২০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় রাসেল ও নাসরিনের সাতদিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ‘আমাদের থানায় যে মামলাটি হয়েছে, সেটাও গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে। তদন্তের প্রয়োজনে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ জন্য আদালতে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’
২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি লোভনীয় মূলছাড় ও ক্যাশব্যাকের অফারে দ্রুত গ্রাহক টানতে সক্ষম হয়। কিন্তু সময়মতো পণ্য না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। সব সমালোচনা পাশ কাটিয়ে দেশের ই-কমার্সকে ‘অন্যরকম’ জায়গায় নেওয়ার কথা বলতেন রাসেল। তবে এখন এক ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি আলোচিত এই উদ্যোক্তা।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ইভ্যালির মোহাম্মদ রাসেল ও শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে আরিফ বাকের নামে এক গ্রাহক ইভ্যালির এমডি রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন।