মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বসুন্ধরার চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ শেখ হাসিনা সবকিছু ধ্বংস করে ফেলেছে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের হাই কমিশনে হামলা: ত্রিপুরার ৩ পুলিশ বরখাস্ত সীমান্তে যেকোনো অপতৎপরতা রোধে প্রস্তুত বিজিবি সেনাসদস্যদের দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বললেন সেনাপ্রধান ‘আগরতলার ঘটনা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ’ ‘পায়ে পড়ে ঝগড়া করলে বাংলাদেশের মানুষ ভারতমুখী হবে না’ দুর্নীতির শীর্ষে পাসপোর্ট-বিআরটিএ-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ‘বাংলাদেশে নয়, ভারতেই শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার’ চিন্ময়ের জামিন শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন ধার্য ঘূর্ণিঝড় ফিনজালে ভারত-শ্রীলঙ্কায় নিহত ২০ সিরিয়ায় ঢুকেছে ইরান-সমর্থিত ইরাকি যোদ্ধারা গাজায় আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত যুদ্ধবিরতির মধ্যেই লেবাননে হামলা চালাল ইসরায়েল, নিহত ১১ জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প

শোধিত ভূউপরিস্থ পানি চাহিদা মেটাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১

বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ পানির ওপর চাপ কমাতে এবং কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার পরিবেশ রক্ষায় পাহাড়ী ঝর্ণা, বৃষ্টি ও নদীর পানি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কক্সবাজারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ স্থানীয় জনগণের প্রাত্যহিক ব্যবহারে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে ইতোমধ্যে কয়েকটি পানি শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে।

এ ধরণের আরো বেশ কয়েকটি শোধনাগার স্থাপণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এসব শোধনাগার থেকে দৈনিক ৬৫ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি কক্সবাজার ও জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিন গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘ইমার্জেন্সি এসিট্যান্স প্রজেক্ট (ইএপি)’ প্রকল্পের সহায়তায়  স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

টেকনাফের নোয়াপাড়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ের মাঝে পুকুরের মতো একটি পরিত্যক্ত জলাশয় সংস্কার করে সেখানে পরিকল্পিতভাবে পানি সংরক্ষণ করে এর তীরেই পানি শোধনাগার স্থাপণ করা হয়েছে। ছয় একর জমির ওপর নির্মিত এই শোধনাগারে বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ দুই কোটি লিটার পানি জমার ব্যবস্থা আছে। এর পাশে প্রতি ঘণ্টায় দুই লাখ লিটার পানি ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে বিশুদ্ধ করা হচ্ছে।

এখান থেকে পানি সরবরাহ পাওয়া রোহিঙ্গা নারী সাবিনা ইসলাম বৃত্তান্তকে জানান, আগে পাহাড়ের নিচে থেকে পানি আনতে কষ্ট হতো। পানিও ভালো ছিল না। এখন মেশিনের সাহায্যে পানি আসায় তারা ভালো পানি পাচ্ছেন। অন্য দিকে টেকনাফের উনচিপ্রাংয়ে প্রতি ঘণ্টায় এক লাখ লিটার পানি ডিজেলচালিত জেনারেটর এবং সোলার বিদ্যুতের সাহায্যে ৩০ হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী এলাকায় দেশের অন্যতম বড় পানি শোধনাগার নির্মাণকাজ চলছে। নাফ নদীর পানি পরিশোধন করে স্থানীয় জনগণ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৫০ একর জমির ওপর পানি শোধনাগারসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণকাজ চলছে। এতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি বিশুদ্ধের পর সরবরাহ করা যাবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি এবং মে-জুন মাসে নাফ নদীর উপরিভাগ থেকে মিষ্টি পানি সংগ্রহ করা হবে।

বাকখালী নদীর পানি বিশুদ্ধ করে কক্সবাজার পৌরবাসীর মাঝে সরবরাহের লক্ষ্যে আলাদা শোধনাগার হচ্ছে। বাকখালী তীরের এই শোধনাগারে প্রতি ঘণ্টায় ১০ লাখ লিটার পানি বিশুদ্ধ করা সম্ভব হবে। এতে কক্সবাজারের পাঁচ লাখ পৌরবাসী সুপেয় পানি পাবেন। এই প্রকল্পে ৪০ লাখ লিটার পানির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্থাপনা নির্মাণকাজ চলছে।

এছাড়াও টেকনাফের উনছিপ্রাংয়ে স্থাপন করা হয়েছে দৈনিক ২৪ লাখ লিটার পানি শোধন ক্ষমতার আরো একটি শোধনাগার। এখান থেকে বর্তমানে দৈনিক ১২ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় আট কিলোমিটার দূরের একটি নদীর পানি শোধন করে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহসহ অনেক এলাকায় ভূমির উপরের পানি বিশুদ্ধ করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারসহ লবণাক্তপ্রবণ এলাকাতে এই উদ্যোগ বড় আকারে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সরকার এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ইএপি প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হালিম খান বৃত্তান্তকে বলেন, সব মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছাতে সরকার ঐকান্তিক চেষ্টা করছে। নিজ দেশ থেকে অধিকারবঞ্চিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও সরকারের দৃষ্টির বাইরে থাকছে না। সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সুপেয় পানির চাহিদার মোট ৭০ ভাগই বৃষ্টি, ঝর্ণা, নদী ও পুকুর থেকে সংগ্রহ করা।

মল এবং গৃহস্থালি আবর্জনা থেকে পানি-বিদ্যুৎ : জরুরি সহায়তার লক্ষ্যে পরিচালিত ইএপি প্রকল্পের অধীনে মানুষের মলমূত্র, রান্নাঘরের আবর্জনা এবং প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ, পানি ও ছাই উৎপাদনের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি ‘ওমনি প্রসেসর’ হিসাবে পরিচিত। এই বর্জ্য শোধনাগারে প্রতিদিন মানুষের মলমূত্র ছয় হাজার কেজি, রান্নারঘরের আবর্জনা, যেমন- শাকসবজির উচ্ছিষ্ট পাঁচ হাজার কেজি এবং প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য থাকবে পাঁচশ কেজি। অর্থাৎ প্রতিদিন দেড় টন বর্জ্য থেকে ৬০-৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই বিদ্যুৎ দিয়েই প্ল্যান্টটি পরিচালিত হবে। এখান থেকে অন্তত ১২০০ লিটার উন্নত মানের বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন হবে। এই পানি ব্যাটারিসহ বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কাজে লাগানো যাবে। একই সঙ্গে প্রতিদিন এক থেকে দেড় টন ছাই উৎপাদন হবে, যা দিয়ে মাটি ভরাট বা বিভিন্ন ঢালু জায়গার প্রটেকশনের কাজে লাগানো যাবে।

ইএপি প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্বের তিনটি দেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই উদ্যোগে আমরা সফল হলে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশাল পরিবর্তন আসবে, যা পরিবেশ রক্ষায় অনেক বড় অবদান রাখবে।


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ