বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। লঘুচাপের প্রভাবে প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। তাই, গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বনবিভাগের দুবলারচরের ভেদাখালী খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। ঝড়ে দুবলা সংলগ্ন গভীর সাগরে এখন পর্যন্ত ট্রলারডুবির মতো কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, আজ শুক্রবার ভোর থেকে দুবলারচর এলাকাসহ সাগরে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ মজুমদার বলেছেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দুবলারচরে প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। শুক্রবার ভোর থেকে ঝড়-বৃষ্টি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা দুবলারচরে আশ্রয় নিয়েছেন।’ চরের ভেদাখালী খালে ৫৪টি ট্রলার নিরাপদে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে আজ শুক্রবারও মোংলা সমুদ্র বন্দর, সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। এর প্রভাবে মোংলাসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ অমরেশ চন্দ্র ঢালী বলেন, ‘লঘুচাপটি ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। কিন্তু, এটির নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। লঘুচাপে সৃষ্ট মেঘমালায় বৃষ্টিপাত হয়ে এটি দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তবে, এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাজুড়ে আরও দুই-তিন দিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামা ও পরিবহণের কাজ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
মোংলা বন্দর বার্থ শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টিপাত হলে জাহাজের পণ্যের সুরক্ষায় কাজ বন্ধ রাখা হয়। জাহাজের হ্যাচ/হ্যাজ (ওপরের ঢাকনা) খোলা থাকলে বৃষ্টিতে মালামালের ক্ষয়ক্ষতিসহ জাহাজের অভ্যন্তরে পানি জমে। তাই, বৃষ্টির সময় কাজ বন্ধ থাকছে। বৃষ্টি কমলে আবার শুরু হবে। এভাবেই কাজ চলছে। কাজ বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের এখনও দেয়নি। কারণ, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতে বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকে না, তবে বিঘ্নিত হয়।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) আ. ওয়াদুদ তরফদার বলেন, ‘আমরা আবহাওয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বন্দরের কাজকর্মও চলছে।’ আবহাওয়ার গতিবিধি বুঝে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে নিম্নচাপ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়েছে, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘ্চুাপটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে আজ সকালে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি উত্তর পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। নি¤œচাপ কেন্দ্রের ৮৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
নি¤œচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।