খোলাবাজারে ডলারের দাম লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। আজ ডলারের দর প্রথমবারের মতো ১০১ থেকে ১০২ টাকায় উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (১৭ মে) বেশকিছু মানি এক্সচেঞ্জে ঘুরে দেখা যায় এই দাম।
এর আগে সোমবার খোলাবাজারে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়। দেশে সম্প্রতি বিদেশি পণ্য ব্যাপক হারে আমদানি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন কারণে ডলারের ব্যাপক সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইলসাম জানান, আন্তঃব্যাংক লেনদেনে গত ৯ মে ডলার বিনিময় হয়েছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। পরদিন টাকার মান ২৫ পয়সা কমানোয় বিনিময় হার বেড়ে হয় ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার থেকে তা ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৮০ পয়সা বৃদ্ধি একটি নতুন রেকর্ড।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুন-মার্চ) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের একই সময়ে ৪ হাজার ২৭৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। এই নয় মাসে যেখানে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। তার মানে ডলার খরচ বেড়েছে। বিপরীতে রফতানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর রেমিটেন্স কমেছে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ডলার যা হাতে আসছে, তার চেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বেশি।
গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ এখন ৪১ বিলিয়র ডলারের দর নেমেছে। আমদানি দায় মেটাতে এখন সরকারকে ৯৭ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনতে হচ্ছে, যার প্রভাবে পণ্যমূল্য ব্যাপক বাড়তে পারে।
পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিনিময় হার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও কয়েকটি ব্যাংকে ইতোমধ্যে ডলারের দর উঠেছে ৯২ থেকে ৯৪ টাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একটি বেসরকারি কর্মকার্তা বলেন, বেসরকারি ব্যাংকেও এখন ডলার সঙ্কট রয়েছে। যেকারণে বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়মিত গ্রাহকদের অগ্রাধিকার।
চাহিদা বাড়ায় খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের দামি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিদেশফেরত প্রবাসী কর্মী ও পর্যটকদের কাছ থেকে মূলত ডলার বিক্রি করেন মানি চেঞ্জারগুলোর কাছে। আবার বিদেশগামীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ডলার কিনে নেন এসব মানি এক্সচেঞ্জ থেকে। গেল সপ্তাহে মঙ্গলবার একদিনেই ডলারে দাম বাড়ে ৮০ পয়সা। যা গত ২১ বছরে কোনদিন একসঙ্গে এতো বাড়েনি এমনটিই জানিয়েছেন একজন মানি এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তা। সেখানে আজ মঙ্গলবার সেই ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৭ টাকায়, আমরা কিনছি এর চেয়ে ১০ থেকে ২০ পয়সা কমে। আবারও কেউ কেউ ১০১ থেকে ১০২ টাকায়ও বিক্রি করছে।