শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭০ ‘দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকুন’ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নবনিযুক্ত ২২ বিচারপতির সাক্ষাৎ কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ ভূষিত করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায়: প্রেস সচিব মানি লন্ডারিংয়ের মামলা থেকে খালাস পেলেন মামুন হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা সৃষ্টিতে উসকানিদাতার পক্ষে ভারত: ফারুক সংস্কার লাগবে, তবে বাকশালের মতো কিছু যেন না হয়: মঈন খান শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য প্রচারে ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা পার্শ্ববর্তী দেশের উসকানি গোটা জাতি ধরে ফেলেছে’ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কোনো ছাড় নয়: আইজিপি ভারতেই শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো উচিত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ৭ ম্যাচ পর জিতল ম্যানসিটি সালাহ শো শেষেও পয়েন্ট খোয়াল লিভারপুল ফরাসি পার্লামেন্টে আস্থাভোটে মাক্রোঁপন্থি সরকারের পতন

লোকসান কমাতে, চাঁদাবাজি বন্ধে ফার্মার্স মার্কেট চান পশু ব্যবসায়ীরা

বৃত্তান্ত প্রতিবেদন
আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০২৩

রংপুরের রহিম মিয়া। ছোট খামারী। স্থানীয় বাজারে গরু কিনে ট্রাকে করে রাজধানীতে নিয়ে আসেন বিক্রি করতে। এজন্য তাকে পদে পদে চাঁদা দিতে হয়েছে। গত কোরবানী ঈদে গাবতলী পশু হাটে এক ট্রাক গরু নামাতেই দিতে হয়েছে দেড় লাখ টাকা।

গত বছরের কোরবানীর সময় গাবতলি হাটে আসা অভিজ্ঞতা বর্ণনায় রহিম মিয়া বলেন, ‘দুই-চার টাকা লাভের আসায় অন্যর কাছে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এত দূর থেকে গরু নিয়ে ঢাকায় আসি। আসার সময় রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয়। গাবতলী ব্রিজ পার হলেই গরু নামাতে দিতে হয় টাকা। এক দুই টাকা নয়, ১ লাখ টাকা দিতে হইছে।’

শুধু গাবতলি হাট নয় সারাদেশের খামারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশের র্দর দুরান্ত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে যে পশু নিয়ে এসেছিলেন তাদের সবার অভিজ্ঞতায় এমন। খামারীদের এমন দূরবস্থা রোধে ও ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ গরু ও খাসির গোশতসহ দুগ্ধজাত পণ্য পৌঁছে দিতে রাজধানী ঢাকায় ‘ফারমার্স মার্কেট’ চালু করতে চায় বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এজন্য ঢাকার অঞ্চলভেদে কৃষক বা খামারিদের জন্য আলাদা মার্কেট বা দোকান বরাদ্দ চায় সংগঠনটি। এজন্য সিটি করপোরেশন বা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চায় সংগঠনটি।

এতে তৃণমূলের খামারিরা সরাসরি এই কৃষকের (ফারমার্স) মার্কেটে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর গোশত, খাসির গোশত, দুধ, পনির, ঘি দইসহ দুগ্ধজাতপণ্য বিক্রি করার সুবিধা পাবেন। সেইসাথে ভোক্তা সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ পণ্য পাবার পাশাপাশি খামারিরাও লাভবান হবেন। এরফলে, উভয়পক্ষই মধ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব থেকেও মুক্তি পাবেন। ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের আদলে এই ফারমার্স মার্কেটের প্রস্তাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের সাথে আলোচনার কথাও জানা গেছে।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর ঈদে কোরবানির জন্য ৯৮ লাখ পশুর সম্ভাব্য চাহিদার বিপরীতে এক কোটি ২২ লাখ পশু ছিল। এরমধ্যে গরু ছিল ৫৫ লাখ। যা ওই সময় কোরবানির জন্য গরুর সম্ভাব্য চাহিদার তুলনায় পাঁচ লাখ বেশি।

তার আগের বছর কোরবানির জন্য গরু ছিল ৪৬ লাখ। বিক্রি হয়েছিল ৩৮ লাখ। দুই বছর আগে কোরবানীর গরু ছিল ৫৫ লাখ। সেখানে উদ্বৃত্ত থেকে গিয়েছিল নয় লাখ গরু।

খামারিদের সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুই বছর ধরে আট থেকে নয় লাখ গরু উদ্বৃত্ত ছিল। তাদের দাবি, দেশে এখন ছোট বড় ১৭ লাখ গরুর খামার রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট হাটগুলোতে নির্ধারিত খাজনা বা হাসিলের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করে ইজারাদাররা। এ জন্য রসিদও দেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও মাংস ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের কম টাকার খাজনা দেয়ার সুবিধা পাওয়ার কথা। ইজারাদার খাজনা বেশি হারে আদায় করলেও আগে চামড়া বিক্রি করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারত ব্যবসায়ীরা। এখন চামড়ার বাজারে মন্দার কারণে সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পশু কেনার পর জবাই করে মাংস বিক্রির বদলে ব্যাপারিদের মতো জীবিত পশু সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে মাংস ব্যবসায়ীরা।

রমজান উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারি উদ্যোগে ‘সুলভ মূল্যে’ দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি হচ্ছে। সেখানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে পণ্য দিয়ে সহায়তা করছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। এখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকায় (বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা), খাসি প্রতি কেজি ৯৪০ টাকায় (বাজারমূল্য ১,১০০ টাকা), ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকায়, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকায় (৯০ টাকা) এবং ডিম প্রতি পিস ১০ টাকায় (বাজারে ১২ টাকা) কিনতে পারবেন। তবে গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার ২০০ টাকা, প্রতি লিটার দুধ ৬০ টাকা ও এক হালি ডিম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২৪ রমজান পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, ৪৫ টন গরুর মাংস, ৩ টন ছাগল, ৯ লক্ষ ৬০ হাজার ডিম,  ড্রেসিং ব্রয়লার ৩০টন এবং প্রায় ৪ হাজার লিটার দুধ।

এ কার্যক্রম মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিটি গাড়ির পেছনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এখান থেকে একজন ক্রেতার ১১০ থেকে ১৮০ টাকা সাশ্রয় হয়। রমজানের সময় এই উদ্যোগের সুবাধাভোগী হয়েছেন অন্য ধর্মাম্বলীরাও।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বে ফারমার্স মার্কেট রয়েছে। যেখানে কৃষক বা খামারিরা সরাসরি ফারমার্স মার্কেটে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশে আমরা যারা খামারি আছি, সরাসরি ফারমার্স মার্কেটে গরু ও খাসি সরবরাহ করব। যেখানে খামারির গরু ও খাসির গোশত ভোক্তাদের কাছে সরাসরি বিক্রি হবে। তিনি বলেন, এখন যেটা হয় সেটা হলো মাঠপর্যায়ের কোনো খামারি বা কৃষকের কাছ থেকে কিংবা স্থানীয় হাট থেকে গরু-খাসি-ছাগল কিনে তা কমপক্ষে দুই তিন হাত বদল হয়ে ঢাকায় কসাইরা জবাই করে বিক্রি করেন। এতে গোশতের মূল্য অনেক বেড়ে যায়। যখন সরাসরি খামারিরা ফারমার্স মার্কেটের নির্ধারিত দোকানে গরু-খাসি সরবরাহ করবেন এতে আর মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। এতে ভোক্তারা নির্ভেজাল জিনিস পাবেন এবং বাজারমূল্য থেকে কম দামে পাবেন। অর্থাৎ ভোক্তারাও লাভবান হবেন, খামারিরাও লাভবান হবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু গোশত নয়, খামারে উৎপাদিত দুধ, খামারিদের তৈরি পনির, দধি, ঘি, বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন বিক্রি হবে ফারমার্স মার্কেটে। আমরা একটা মার্কেট বানাব, যেখানে সারা দেশ থেকে খামারিরা তাদের পণ্য নিয়ে আসবে। ডেইরি অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমরা ভোক্তাদের নিশ্চিত করব যেসব পণ্য ফারমার্স মার্কেটে থাকবে সেগুলো শতভাগ নিরাপদ ভেজালমুক্ত পণ্য।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘কেউ যদি সুলভ মূল্যে, সহজেই ভোক্তাদের হাতে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দিতে চায় তবে আমরাও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। যে কান ভালো উদ্যোগের সাথে থাকবে ডিএনসিসি।’


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ