ফেব্রুয়ারির পর থেকে মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে শহরের ৭৫ শতাংশ নিম্নবিত্ত পরিবার। আর পুরো মে মাস জুড়ে তিনবেলার একবেলা খাবার জোটেনি পাঁচ ভাগের একভাগের। সম্প্রতি ব্র্যাক ও পিপিআরসি এক যৌথ জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। যার মূল শিকার হচ্ছেন নারীরা।
রাজধানীতে দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছর ধরে পাথর ভাঙ্গার কাজ করছেন জামিলা বেগম। প্রায় সকালে না খেয়েই কাজে যান তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বাসা বেধেছে নানা অপুষ্টিজনিত রোগ। জানালেন, এ মাসে তার পাতে মাছ মাংস উঠেছে মাত্র একবার।
জামিলা বেগম বলেন, তিনশ টাকা কামাই করি, বাজারে কী পাওয়া যাবে তা দিয়ে? কী খাবো? নাতি-পুতিদের খাইয়ে থাকলে খাই, না থাকলে না খাই।
রাজধানীর বস্তিগুলোতে ঘুরলে চোখে পড়ে এমনই সব গল্প। শহুরে উচ্চ বাজারদরে খরচের লাগাম টানতে খাবার গ্রহণ কমিয়েছেন অধিকাংশই। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে বাকি সবার কথা ভাবতে গিয়ে বেশি ভুগছেন নারীরাই। ফলে হচ্ছে হাড় ও হাটুর ব্যাথা। রয়েছে ক্যালসিয়ামেরও অভাব।
বস্তিবাসীদের একজন বলেন, শাক-ডাল খাই তাই শরীর দুর্বল থাকে। মাংস কোথায় পাবো টাকাই কামাই করতে পারি না। আরও একজন বলেন, ছেলে মেয়েকে খাওয়াবো নাকি নিজে খাবো? ছেলে মেয়েকে খাইয়ে থাকলে নিজে একটু খাই।
ব্র্যাক ও পিপিআরসি এক যৌথ জরিপে দেখা যায়, খাবারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় মে মাসে শহরাঞ্চলের বস্তির ৫ শতাংশ পরিবারের ঘরে একবেলাও খাবার ছিলো না অন্তত একদিন। আর পুরো মাস জুড়ে একবেলা খাবার জোটেনি ২১ ভাগ পরিবারের। ফেব্রুয়ারির পর থেকে মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে প্রতি ৪টি পরিবারের ৩টিই। আর দুধ খাওয়া কমিয়েছে ৪৭ শতাংশ পরিবার।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ রুমানা হক জানালেন, প্রথাগতভাবেই পরিবারের অন্যান্যদের জন্য একটু ভালো খাবার নিশ্চিত করতে ত্যাগ স্বীকার করছেন ঘরের নারীরাই।
রুমানা হক বলেন, মা এবং শিশু, তাদের যদি আমরা যথাযথ খাদ্য দিতে না পারি এতে আমরা আমাদের ইকোনোমিতে কী দেখতে পাবো? আমাদের যে জনবল আছে তাদের আমরা অপুষ্টিজনিত জনবল হিসেবে পাবো।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে পণ্য আমদানিতে বিকল্প পথ খুঁজছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চবাজারদরের সূদূর প্রভাব পড়ছে নারীদের স্বাস্থ্যে, যা আগামীতে হুমকির মুখে ফেলবে এসজিডি বাস্তবায়ন।