শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বদলির ৫ মাস পরও কর্মস্থলে যোগ দেননি মাউশি ঢাকার ডিডি সাখায়েত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫১:০৮ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ৩৮৪ বার পড়া হয়েছে
বৃত্তান্ত২৪ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: প্রশাসনিক অসদাচরণের অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে শাস্তিমূলক বদলির পাঁচ মাস পরও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ১২ এপ্রিল ইস্যু করা তার বদলির আদেশটি সোমবার পর্যন্ত বাতিলও করা হয়নি। এমনকি তাকে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের কোন অনুমতিও দেয়নি মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর। তারপরও সরকারি বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে ৫ মাসের বেশি সময় সপদে বহাল রয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

এদিকে, নিজের বদলির আদেশ বহাল থাকলেও ৫ মাসে তিনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭০০’র বেশি শিক্ষককে ঘুষের বিনিময়ে বদলি করে প্রায় ২৫ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযাগ করেছেন।

 

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. আলমগীর হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, ১২ এপ্রিল ইস্যু করা সাখায়েত হোসেন বিশ্বাসের বদলির আদেশটি সোমবার পর্যন্ত বাতিলও করা হয়নি। তবে সেখানে কাউকে এখনো পদায়নও করা হয়নি। এ কারণেই হয়তো তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পাঁচ মাসেও কাজে যোগ না দেওয়ার সুযোগ রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সচিব অথবা মাউশি’র মহাপরিচালক বলতে পারবেন।

মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ও পরিচালক (সরকারি মাধ্যমিক) বেলাল হোসেনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তারা কল রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তাতে তিনি সাড়া দেননি।

একইভাবে সাখায়েত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগা করা হলে, তিনিও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রচলিত চাকরিবিধি অনুযায়ী, বাতিল না হলে বা দায়িত্ব পালনে লিখিত অনুমতি না দিলে, বদলির আদেশপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে ১৪ দিনের মধ্যেই নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। এ সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিলে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

চাকরিবিধি অনুযায়ী, নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখলে, নির্দিষ্ট কর্মদিবসের পরে বদলিকৃত কর্মকর্তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলের সকল কার্যক্রমই অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক পদে যোগ দেওয়া সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস গত ৫ বছরের প্রায় ৩,১০০ জন শিক্ষকের বদলি ও পদায়নের আদেশ জারি করেছেন। এ সময় তিনি শিক্ষকদের থেকে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের মাধ্যমে প্রায় ৯০ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, তিনি সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ঢাকায় বদলির জন্য শিক্ষকপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা, ঢাকার বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য তিন লাখ টাকা এবং মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার জন্য দুই লাখ টাকা হারে বদলি বাণিজ্য করেন।

অভিযোগে দেওয়া সাখায়েত হোসেনের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের বিবরণীতে বলা হয়, তিনি ঢাকার বসুন্ধরায় একটি ছয়তলা আবাসিক ভবন, পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি, রায়ের বাজারে আট কাঠা জমি কিনেছেন। নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে তার প্রায় ১১টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যেখানে মোটা অংকের টাকা গচ্ছিত রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক না হয়েও তিনি ঢাকার গভর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বাসায় অবৈধভাবে বসবাস করছেন।

এছাড়াও বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের এমপিও মাউশি’র আঞ্চলিক অফিসগুলোর পরিচালকদের দপ্তরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বাতিল (রিজেক্ট) হওয়া কয়েকশ’ শিক্ষককে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে এমপিওভূক্তর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী নেতার নাম ব্যবহার করে তিনি প্রশাসনকে প্রভাবিত করে পদে টিকে থাকা, বদলির পরও সপদে বহাল থেকে অন্যায়ভাবে শিক্ষকদের শাস্তিমূলক বদলি এবং ওই পদে পদায়নে আগ্রহী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, মাউশি ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক পদে যোগদানের আগে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি অধিদপ্তরের সরকারি বিদ্যালয় শাখার সহকারি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখনও তার বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বদলির ৫ মাস পরও কর্মস্থলে যোগ দেননি মাউশি ঢাকার ডিডি সাখায়েত

আপডেট সময় : ১০:৫১:০৮ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: প্রশাসনিক অসদাচরণের অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে শাস্তিমূলক বদলির পাঁচ মাস পরও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ১২ এপ্রিল ইস্যু করা তার বদলির আদেশটি সোমবার পর্যন্ত বাতিলও করা হয়নি। এমনকি তাকে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের কোন অনুমতিও দেয়নি মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর। তারপরও সরকারি বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে ৫ মাসের বেশি সময় সপদে বহাল রয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

এদিকে, নিজের বদলির আদেশ বহাল থাকলেও ৫ মাসে তিনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭০০’র বেশি শিক্ষককে ঘুষের বিনিময়ে বদলি করে প্রায় ২৫ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযাগ করেছেন।

 

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. আলমগীর হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, ১২ এপ্রিল ইস্যু করা সাখায়েত হোসেন বিশ্বাসের বদলির আদেশটি সোমবার পর্যন্ত বাতিলও করা হয়নি। তবে সেখানে কাউকে এখনো পদায়নও করা হয়নি। এ কারণেই হয়তো তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পাঁচ মাসেও কাজে যোগ না দেওয়ার সুযোগ রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সচিব অথবা মাউশি’র মহাপরিচালক বলতে পারবেন।

মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ও পরিচালক (সরকারি মাধ্যমিক) বেলাল হোসেনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তারা কল রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তাতে তিনি সাড়া দেননি।

একইভাবে সাখায়েত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগা করা হলে, তিনিও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রচলিত চাকরিবিধি অনুযায়ী, বাতিল না হলে বা দায়িত্ব পালনে লিখিত অনুমতি না দিলে, বদলির আদেশপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে ১৪ দিনের মধ্যেই নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। এ সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিলে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

চাকরিবিধি অনুযায়ী, নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখলে, নির্দিষ্ট কর্মদিবসের পরে বদলিকৃত কর্মকর্তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলের সকল কার্যক্রমই অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক পদে যোগ দেওয়া সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস গত ৫ বছরের প্রায় ৩,১০০ জন শিক্ষকের বদলি ও পদায়নের আদেশ জারি করেছেন। এ সময় তিনি শিক্ষকদের থেকে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের মাধ্যমে প্রায় ৯০ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, তিনি সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ঢাকায় বদলির জন্য শিক্ষকপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা, ঢাকার বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য তিন লাখ টাকা এবং মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার জন্য দুই লাখ টাকা হারে বদলি বাণিজ্য করেন।

অভিযোগে দেওয়া সাখায়েত হোসেনের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের বিবরণীতে বলা হয়, তিনি ঢাকার বসুন্ধরায় একটি ছয়তলা আবাসিক ভবন, পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি, রায়ের বাজারে আট কাঠা জমি কিনেছেন। নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে তার প্রায় ১১টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যেখানে মোটা অংকের টাকা গচ্ছিত রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক না হয়েও তিনি ঢাকার গভর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বাসায় অবৈধভাবে বসবাস করছেন।

এছাড়াও বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের এমপিও মাউশি’র আঞ্চলিক অফিসগুলোর পরিচালকদের দপ্তরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বাতিল (রিজেক্ট) হওয়া কয়েকশ’ শিক্ষককে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে এমপিওভূক্তর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী নেতার নাম ব্যবহার করে তিনি প্রশাসনকে প্রভাবিত করে পদে টিকে থাকা, বদলির পরও সপদে বহাল থেকে অন্যায়ভাবে শিক্ষকদের শাস্তিমূলক বদলি এবং ওই পদে পদায়নে আগ্রহী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, মাউশি ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক পদে যোগদানের আগে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি অধিদপ্তরের সরকারি বিদ্যালয় শাখার সহকারি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখনও তার বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল।