অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার চাইতেও বাংলাদেশে পেট্রোলের দাম বেশি। শুক্রবার রাত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের অজুহাতে দেশে পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এতে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর সড়কগুলোতে নগর পরিবহনের সংকটও লক্ষ্য করা গেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রার মান হিসাব করে দেখা যায়, অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার ৩ দশমিক ৮০ রুপি সমান বাংলাদেশের ১ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম শ্রীলঙ্কান মুদ্রার হিসাবে দাঁড়ায় ৫১৩ রুপি। বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় পেট্রোলের দাম ৪২০ শ্রীলঙ্কান রুপি। সেই হিসাবে পেট্রোলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কায় ৯৩ রুপি কম।
দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে।’
দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের বৃদ্ধি করা নতুন মূল্য শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত রাতে বলেন, ‘জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করেনি।’
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনঃবিবেচনা করা হবে।’
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি কমেছে ৮৯ ডলার। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও এখন তা কমে এসেছে। বর্তমানে মন্থর বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। এরই মধ্যে শিল্প কার্যক্রম কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমেছে। ফলে তেলের মূল্যও কমেছে। মাত্র দুই মাস আগেও ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ছিল ১২০ ডলারের ওপরে। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ইউএস বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডাব্লিউটিআই) তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৯ ডলারের নিচে নেমে যায়। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে ৯৪ ডলারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে শুক্রবার রাত থেকে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লিটারে ডিজেল ৩৪ টাকা, পেট্রোল ৪৪ এবং অকটেনের দাম বেড়েছে ৪৬ টাকা। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা হয়েছে।
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় দেশটিতে বাসভাড়াও কমানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই তা কার্যকরও হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম কলম্বো পেইজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে বাসভাড়া কমিয়ে নতুন ভাড়া কার্যকর করেছে জাতীয় পরিবহন কমিশন (এনটিসি)।
এনটিসি’র মহাপরিচালক ড. নীলান মিরান্ডা বলেছেন, এনটিসির সুপারিশ এবং পরিবহন মন্ত্রীর অনুমোদনের পর ন্যূনতম বাসভাড়া ৩৪ রুপি করা হয়েছে। বেশি ভাড়া আদায় করা হলে অভিযোগ করার কথাও বলা হয়েছে।
ডিজেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশটিতে বাসভাড়া আগের তুলনায় ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। ডিজেল সংকটের কারণে এর আগে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ন্যূনতম বাসভাড়া ৩৮ রুপি করা হয়েছিল। জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় এখন ন্যূনতম ভাড়া ৩৮ রুপি থেকে কমিয়ে ৩৪ রুপি করা হয়েছে।
মীরান্ডা বলেছেন, শ্রীলঙ্কা পরিবহন বোর্ড এবং অন্যান্য যাত্রী পরিবহন সংস্থাকে সেদিন রাত থেকেই নতুন ভাড়া কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন রেট অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ভ্রাম্যমাণ পরিদর্শক মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কলম্বো পেজের আরেক খবরে বলা হয়, আগামী সোমবার থেকে দেশটিতে এলপি গ্যাসের দাম কমিয়ে নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে শ্রীলঙ্কার শীর্ষ গ্যাস কোম্পানি লিটরো।
দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষের নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২০০ রুপির বেশি কমতে পারে।
লিটরোর কাছে গ্যাসের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মুদিথা পেইরিস। তিনি বলেছেন, আমাদের যথেষ্ট গ্যাসের মজুত আছে। ভবিষ্যতে দেশের মানুষকে গ্যাসের জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়াতে হবে না। এ ছাড়া আগামী অক্টোবর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্যাসের অর্ডার দেয়া আছে।
আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরের চালান নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পেইরিস বলেছেন, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমে যাওয়ার সুবিধা জনগণকে দেয়া হবে।