একবারও পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে না পারা রনিল বিক্রমাসিংহে বৃহস্পতিবার (১২ মে) ষষ্ঠবারের মতো শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ৭২ বছরের প্রবীণ এ রাজনৈতিক লুজার হিসেবে পরিচিত দেশটিতে। যদিও তিনি ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) একমাত্র সংসদীয় প্রতিনিধি। দলটি একসময়ের শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি, যা শ্রীলঙ্কার গত নির্বাচনে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
সাবেক আইনজীবী বিক্রমাসিংহে রাজনৈতিক অভিজাত পরিবারের সদস্য। তার চাচা জুনিয়াস জয়াবর্ধনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটির রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বিক্রমাসিংহে একবার এএফপিকে জানিয়েছিলেন, তিনি সম্ভবত একজন সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারতেন। যদি সেদিনের সরকার ১৯৭৩ সালে তার পরিবারের সংবাদপত্রের ব্যবসাকে জাতীয়করণ না করতো।
শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় তামিল টাইগার গেরিলাদের বোমা হামলায় নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রানাসিংহে প্রেমাদাসা। এরপর ১৯৯৩ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন বিক্রমাসিংহে।
দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজনীতির রাজবংশীয় প্রকৃতির ওপর আলোকপাত করে প্রেমাদাসার ছেলে সজিথ বর্তমান বিরোধী নেতা। এই সপ্তাহে তাকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছিল।
বিক্রমাসিংহের প্রথম মেয়াদ এক বছরের সামান্য বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল। তিনি ২০০১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসেন এবং দেশকে মন্দা থেকে বের করে এনে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন।
তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং পরবর্তী দশক তিনি রাজনৈতিক প্রান্তরে কাটিয়েছিলেন।
বিক্রমাসিংহে দুটি রাষ্ট্রপতি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যান এবং তার দলকে একের পর এক নির্বাচনী পরাজয়ের দিকে নিয়ে যান। এমনকি নিজের সমর্থকরাও তাকে ‘রেকর্ড হারা’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে প্ররোচিত করেন।
২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপাকসের নির্বাচনী পরাজয় ঘটে। এরপর বিরোধীরা কর্তৃত্ববাদী নেতার বিরুদ্ধে ঐক্য প্রার্থী হিসেবে বিক্রমাসিংহের পেছনে সমাবেশ করেন। পরে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
তবে এ রাজনীতিকের ‘মিস্টার ক্লিন’ ইমেজটি সেই বছরের শেষের দিকে মলিন হয়ে যায়। ওই সময় তার প্রশাসন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বন্ডের সঙ্গে জড়িত একটি অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক কেলেঙ্কারিতে ধাক্কা খায়।
মাল্টি-মিলিয়ন ডলার কেলেঙ্কারির একজন মূল অভিযুক্ত সেই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্জুনা মহেন্দ্রন ছিলেন বিক্রমাসিংহের সহপাঠী।
বারবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসা রাজনীতিবিদের শাসনামলে ক্রোনিজম এবং পূর্ববর্তী রাজাপাকসে শাসনামলের সদস্যদের বিচার করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তার সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কিকব্যাক ও সরকারি অর্থায়ন বন্ধ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ২০১৮ সালে দেশকে সংকটের মধ্যে ফেলেছিল। তিনি ছয় সপ্তাহের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার আগে সুপ্রিম কোর্ট একে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়।