সরবরাহে সংকট না থাকলেও রাজধানীর খুচরা বাজারে ফের চালের দাম বাড়ছে। ডাল, সয়াবিন তেল ও আটা বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। পাশাপাশি খুচরা বাজারে থেকে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে চিনি নেই বললেই চলে। তবে দু-এক দোকানে পাওয়া গেলেও দাম আকাশছোঁয়া।
সরকার বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। সাত দিনের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এ দিন সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক খুচরা পণ্য মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মাঝারি আকারের চাল ১.৮৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে সরু চাল বিক্রি হয়েছে ১.৪৫ শতাংশ বেশিতে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ২.৫০ শতাংশ। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি মসুর ডাল কিনতে ক্রেতার ১.৫০ শতাংশ বেশি দাম গুনতে হচ্ছে। এছাড়া সাত দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ৯.৫২ শতাংশ।
রাজধানীর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় কেজিতে ৪০ টাকা বেশি। তবে অধিকাংশ দোকানেই মেলেনি চিনি। নয়াবাজারের মুদি দোকানি মো. তুহিন বলেন, কোম্পানি থেকে চিনির সরবরাহ নেই। পরিবেষক পর্যায়েও চিনি নেই। যে কারণে পাইকারি বিক্রেতারা চিনি পাচ্ছে না। ফলে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতারা চিনি না পেয়ে বিক্রি বন্ধ রেখেছি। তবে কিছু দোকানে কয়েক প্যাকেট চিনি থাকায় তারা সেই চিনি খোলা ভাবে বিক্রি করতে পারছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন বলেন, মিলাররা আবারও চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। এবার তাদের অজুহাত ধান নেই, দাম বেশি। এমন কথা বাজারে রটিয়ে মাঝারি ও সরু চালের দাম বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭৮ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৬২-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মাঝারি চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪-৫৮ টাকা। যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৬ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, সাত দিন আগে প্রতি কেজি খোলা আটা ৫৮ টাকা বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্যাকেট আটা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৪ টাকা। যা চার দিন আগেও ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। তিন দিন আগে দাম ছিল ১০৫ টাকা।
প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা সাত দিন আগে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজারের নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. নাজিমুদ্দিন বলেন, বাজারে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না যার দাম কম। সবকিছুর দাম বাড়ছে। এর মধ্যে চাল, ডাল তেলের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সঙ্গে বাজারে চিনি নেই। কয়েকটি দোকান ঘুরে এক কেজি কিনতে পেরেছি। দাম ১৩০ টাকা। এছাড়া প্রতিবছর এ সময় পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এবার বিক্রেতারাও দাম বাড়িয়েছে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারে নতুন আঙ্গিকে তদারকি জোরদার করা হবে। ইতোমধ্যে টিম গঠন করা হয়েছে। চিনির মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কঠোর ভাবে তদারকিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম সহনীয় করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোনো অনিয়ম পেলেই আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙ্গাস মাছ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট সাইজের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, রুই মাছ আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চাষের কই ২৪০ টাকা, বড় কাতল ৩৬০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে আকার ভেদে ১০০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৭০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ টাকা, ছোট বোয়াল ৬০০, বাইম মাছ ৭০০ টাকা, ছোট বাইলা মাছ ৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৯ অক্টোবর থেকে বাজারে এসেছে ইলিশ মাছ। বাজারে প্রচুর ইলিশ এলেও দাম এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
শুক্রবার বাজারে জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। এছাড়া বাজারে এক কেজির কম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেড় কেজি বা তারচেয়ে বেশি ওজনের বড় ইলিশগুলো ১৪০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার স্থানীয় একটি মাছের বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাছ কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলাম রুবেল। মাছের দাম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছোট একটা চাকরি করে ঢাকায় পরিবার নিয়ে টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবজি থেকে শুরু করে ডিমের দামও বাড়তি। গরু-খাসির মাংস কিনে খাওয়ার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না।
গত সপ্তাহের মতোই আজ বাজারে এক কেজি ফার্মের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। এছাড়া, দাম কমেছে দেশি ও পাকিস্তানি লাল মুরগির। গত সপ্তাহে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পাকিস্তানি লাল মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। প্রতিকেজি দেশি মুরগির দাম ৪০০-৪৫০ টাকা। যা আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫০০-৫২০ টাকায়।
টাউন হল বাজারের মুরগি বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, দেশি মুরগির তুলনায় ফার্মের মুরগি বেশি বিক্রি হয়। দাম আগের সপ্তাহের মতোই আছে। তবে আগের তুলনায় অন্যান্য মুরগির বিক্রি কমেছে।
বাবুল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, দেশি মুরগি কেনার ইচ্ছা থাকলেও এখনো দাম বেশি। তাই ফার্মের মুরগি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। তবে এর দামও বাড়তি। কয়েকদিন পর হয়তো ২০০ করে কিনতে হবে।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরে বাজারে গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে। বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, দাম এক জায়গায় থাকলেও বিক্রি কম। আগে প্রতি শুক্রবার ৩-৪টা গরু বিক্রি করতাম। সেখানে এখন ১টা করছি।
সপ্তাহের বাজের কিছুটা বেড়েছে ডিমের দাম। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।সাদা ডিমের দাম ১৩০ টাকা ডজন। দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
বিক্রেতা কাউসার আহমেদ বলেন, মাঝখানে ডিমের দাম কমে ১২০-১৩০ টাকা হলেও এখন কিছুটা বেড়েছে। কারণ ফার্ম থেকে বেশি দামে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।