বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বাংলাদেশ উপকূলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। এর প্রভাবে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে উপকূলীয় অঞ্চল। এমন শঙ্কার কথা উঠে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায়। যাতে দেখা যায়, বৈশ্বিক উষ্ণতায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার গড়ে ৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার হলেও, বাংলাদেশের উপকূলে তা ৫ দশমিক ৩।
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ব্যাপক হারে কার্বন নিঃসরণের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে আশংকাজনক হারে। তাপমাত্রা বাড়ার প্রভাবে গলছে হিমবাহ ও মেরু অঞ্চলের বরফ। এই বরফ গলা পানি গিয়ে মিলছে সাগরে। ফলে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। ডুবে যাবার তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন এলাকা।
এবার নজর দেয়া যাক বাংলাদেশ উপকূলে। জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, ত্বকের ভাঁজে বয়সের ছাপ। প্রজন্মান্তরের অভিজ্ঞতা যাদের ঝুলিতে, তাদের সেই ঝাঁপি খুললেই আঁচ পাওয়া যায়, কতটা বাড়ছে সাগরজল?
স্থানীয়দের একজন বলেন, বাগান প্রতি বছর ভাঙেত ভাঙেত এদিকে (ডাঙা) আসে। প্রতি বছর পানি বাড়ে। আরও এক স্থানীয় বলেন, আমি যখন এদেশে আসছি তখন সাগর অনেক দূরে ছিল। এখন থেকে দুই ঘণ্টা যাওয়া লাগতাে। আর এখন জঙ্গলই নেই। সব কিছু নাই হয়ে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চারটি স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানান, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বৈশ্বিক গড় হারও, হার মেনেছে বাংলাদেশ উপকূলে। বিশ্বজুড়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ৩.৮ মিলিমিটার হারে বাড়লেও দেশের উপকূলে বাড়ছে ৫.৩ হারে।
এবিষয়ে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্ল্যাড ম্যানেজমেন্টের পরিচালক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা একটু বেশি পেয়েছি। এর কারণ হচ্ছে এখানে তামমাত্রা বৃদ্ধির ফলে থারমার এক্সপ্লেশন হয় এবং উইন্ডোর একটা প্রভাব আছে। আমাদের এখন থেকেই এটার জন্য এডাপটেশনের প্লানিং নিতে হবে। না হলে কোস্টাল এরিয়ার জনজীবন অনেক বেশি কষ্টকর হবে।
এই গবেষক বলেন, আগে টাইডাল গেজ পদ্ধতির গবেষণায় চট্টগ্রাম উপকূলে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বেশি দেখালেও, এবারের স্যাটেলাইট তথ্য নির্ভর গবেষণায় ভিন্ন ফল এসেছে। এতে বৃদ্ধির হার গাঙ্গেয় অববাহিকা অর্থাৎ সুন্দরবন উপকূলে সবচেয়ে বেশি, তারপরে মেঘনা অববাহিকায় এবং সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে না পারলে বাংলাদেশ উপকূলের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ বিপর্যয়। প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে জানান গবেষণা দলের প্রধান, এই অধ্যাপক।