আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে কেন্দ্র করে দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি রোধ, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করে কালো টাকার মালিকদের আইনের আওতায় আনা এবং ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় নিবেদিত বেসরকারি সংগঠন ’ভলান্টারি কনজুমারস ট্রেনিং এন্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা)।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভোক্তা’র নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল।
এছাড়া ভোক্তার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর, ভাইস চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন নওরোজ, পরিচালক লুৎফর রহমান লিটন, ড. লতিফুল বারী, মহসীনুল করিম লেবু, সাইদুল আবেদীন ডলার, মিজানুর রহমান তালুকদার, নুরুন নবী, গোলাম কবীর ও ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে খলিলুর রহমান সজল বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করা কিংবা পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনতে দেওয়া অনৈতিক কর সুবিধা এখন দেশে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ‘ভোক্তা’ মনে করে, বারবার এ ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করে। তাই এ ধরনের বিধান বাতিল করে আসন্ন বাজেটে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর শাস্তির বিধান ও আইনের কঠোর প্রয়োগ করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করতে হবে। এ ধরণের কঠোর সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অর্থ পাচারকে নিরুৎসাহিত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পে কর ফাঁকি রোধে কাঁচামাল ব্যবহার, পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারাইজড সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং কার্যকর অডিট ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানানো হয়।
বাজেটের পর যেনো দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে খলিলুর রহমান সজল বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে শুল্ক-কর বৃদ্ধির ফলে যাতে জনদুর্ভোগ না বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল প্রভৃতির আমদানি শুল্ক ও মূসক সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।
একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বাজার কারসাজি ও সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন কর্তৃক চিহ্নিত বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যকর তদারকি ও নিষ্পত্তির মাধ্যমে অসাধু গ্রুপগুলোর কাছে সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
কর্মহীনদের কর্মসংস্থান ও আয়-বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব এবং উৎপাদন ও যোগান বাড়ানো, চাহিদা কমানোর উপর বিশেষ জোর দিয়ে আগামী অর্থবছরেও সরকারকে ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী গোষ্ঠীর চাপ সত্বেও অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সারের ওপর চাহিদা অনুযায়ী ভর্তূকি অব্যাহত রাখতে হবে, বলেন তিনি।
ডলার ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির অযুহাতে বৃদ্ধি পাওয়া সকল ঔষধ ও চিকিৎসা উপকরণের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাজেটে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় গঠিত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও বিস্তৃত করতে প্রয়োজনীয় বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ রাখার জোর দাবি জানান তিনি।