বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: স্বাধীনতা পুরস্কারে বিতর্কিত ব্যক্তির নাম অন্তভূক্তিসহ বিভিন্ন ত্রুটির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের কাছে পৃথকভাবে বিস্তারিত জানতে চাইবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কারা কোন উদ্দেশে আমির হামজার নাম স্বাধীনতা পুরস্কারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রস্তাব করেছে তা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের কোন অসৎ উদ্দেশ্যের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য সরকারের উপ-সচিব আসাদুজ্জামান তার পিতা আমির হামজার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সেই প্রস্তাবে সমর্থন করেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এসব বিষয়ও এড়িয়ে যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। শুধু সরকার নয় স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিও বিব্রত। এ কমিটির চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
উল্লেখ্য, এ বছরের ১৫ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ২০২২ সালে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মো. আমির হামজার নাম ঘোষণা করে সরকার। পরে জানা যায় এই ব্যক্তি হত্যা মামলায় দণ্ডিত। তার সাহিত্যকর্ম নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়। সমালোচনার মধ্যে ১৮ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা অপর এক আদেশে তার নাম বাদ দিয়ে এ বছরের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তার মনোনয়নের পুরো প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবেই সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, অনেক তথ্যই গোপন করে আমির হামজার নাম স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। বিষয়টি সরকারকে বিব্রত করেছে। কোনওভাবেই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিষয়টি বিব্রতকর। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে সরকারের ১৬ সচিবের সমন্বয়ে গঠিত এ সংক্রান্ত সচিব কমিটির সদস্য তপন কান্তি ঘোষ এবং সরকারের উপ-সচিব আমির হামজার ছেলে মোহম্মদ আসাদুজ্জামানের কাছে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তারা চিঠি পেয়েছেন বলেও জানা গেছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন তপন কান্তি ঘোষ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, আমি সচিব কমিটির সদস্য। আমির হামজার ছেলে উপ-সচিব মোহম্মদ আসাদুজ্জামান আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন। তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি পরে জানাতে পারবেন। আমি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছি।
এদিকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য আমির হামজাকে মনোনীত করার বিষয়টি এ সংক্রান্ত কমিটির ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা চূড়ান্ত করা পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির চেয়ারম্যান বলছেন, এটা আমার ব্যক্তিগত এবং কমিটির যৌথ ব্যর্থতা। গত ২৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। তবে আমাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। আমির হামজাকে নিয়ে অনেক ‘ভুল তথ্য’ কমিটির কাছে জমা পড়েছিল। অনেক ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল, সত্য গোপন করা হয়েছিল। কারা ভুল তথ্য দিয়েছেন খতিয়ে দেখবো। কমিটির ফোরামে এটা আলোচনা হবে। আমাদের যেটা ভুল হয়েছে সেটা সংশোধন করেছি।
উল্লেখ্য, আমির হামজার ছেলে মোহম্মদ আসাদুজ্জামান সরকারের উপ-সচিব। তিনি তার বাবার নাম এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ সেই প্রস্তাবে সুপারিশ করেন।
জানা গেছে, আমির হামজা শাহাদাত হোসেন ফকির নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ১৯৭৮ সালে ওই খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল। ওই ঘটনায় আমির হামজা ও তার ভাইসহ ছয়জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর জেল খেটে ১৯৯১ সালে জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।