গত ১৫ বছরে ১২০ কোটি টাকা খরচ করেও পুলিশের হাতের ইশারা থেকে বের হতে পারেনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল টাকা হাতিয়ে নেয়ার। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাস্তবতার সাথে মিল না রেখে যতই ডিজিটাল করা হোক না কেন, কোন প্রকল্পতেই মিলবে না সুফল। এদিকে, সিটি করপোরেশন বলছে, নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা।
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা। চিন্তা করতে গেলেই মাথায় আসবে এক অনিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থার। সরু রাস্তায় চোখে পড়বে হাজার হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি। নিজেও যাবো না অন্যকেও যেতে দিব না এই নীতিতে বিশ্বাসী রং চটা বাস, সাথে তিন চাকার সিএনজি। আর দিন দিন নিয়ন্ত্রণেই বাইরে চলে যাওয়া প্যাডেল রিকশা সাথে নতুন সংযোজন নিজেদের হারকিউলিস ভাবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
সড়কে দেখা যায় এমন সব যানবাহনই আছে ঢাকার রাস্তায়। আছে যান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক বাতি। কিন্তু শুধু নেই লাল-সবুজ আলোর নির্দেশনা।
তবে ঢাকার রাস্তায় লাল সবুজ বাতি জ্বালানোর চেষ্টার কমতি ছিল না। একের পর এক নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে প্রথম স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক লাইট স্থাপন করা হয়। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিছুদিন না যেতেই তা অকার্যকর হয়ে পরে। ২০১২-১৩ সালে সেই অকার্যকর বাতিতেই আলো ফেরাতে চলে চেষ্টা। দেয়া হয় নতুন করে অর্থ বরাদ্দ।
এভাবেই গত ১৫ বছরে কখনো রক্ষাণাবেক্ষণ, কখনো ডিজিটাল সিগন্যাল লাইট স্থাপন, কাউন্টডাউন, সৌর প্যানেল কিংবা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপনের নামে খরচের অঙ্কটা গিয়ে ঠেকেছে ১২০ কোটি টাকায়।
মাঝে একবার ট্রাফিক পুলিশের হাতে ডিজিটাল সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে তুলে দেয়া হয়েছিল রিমোট কন্ট্রোলও। কিন্তু সেগুলো নাকি চুরি হয়ে যায়। তাই এখনো ঢাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে একমাত্র ভরসা ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারা।
তবে এই হাতের পেছনেও ব্যয়টা নেহাতই কম না। ঢাকা শহরে প্রায় সাড়ে ছয় শতাধিক স্থানে দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ৩ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। যাদের জন্য বেতন-ভাতা বাবদ বছরে সরকারের ব্যয় প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু এরপরও ক্রমবর্ধমান যানজটের লাগাম টেনে ধরা যায়নি।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘মেয়র অফিসের যারা সিগন্যালের উদ্যোক্তা ছিলেন তাদের কেউই সিগন্যাল জানেন না। প্রজেক্ট নিলেই তো পাশ হয়ে যায়। যার ফলে আগের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন না হলেও জবাবদিহি না থাকায় পরের প্রজেক্ট নিতে পারছে। এইসব প্রজেক্ট নিয়ে তারা হরিলুট করেছে অর্থের।’
এক পরিসংখ্যানে দেখায় যায়, ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। অথচ গত ১৫ বছরে সেই ক্ষতি কমানো তো যায়ইনি উল্টো সড়কে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা। দু’জন নগরপিতা থেকেও নগর ছিল অভিভাবকহীন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা সিটির ট্রাফিক সিগন্যালকে পূর্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সেটা শাহবাগ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পাইলটিংয়ের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। যেখানে যেখানে সিগন্যালের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে বুয়েট ম্যাপিং করছে। তারা কস্ট নির্ধারণ করছে। আমরা সেটা পেলে কাজ শুরু করবো।’
সবশেষ ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) যুক্ত করে নতুন প্রকল্প নেয়া হলেও তা আলো জ্বালাতে পারেনি। হিসেবমতে বর্তমানে ঢাকার সড়ক সংযোগগুলোতে মোট ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ১১০টি। শুধু গুলশান ২ ছাড়া বাকি সবগুলোর কাজ ঝড় ঝাপটা থেকে নিজেকে রক্ষা করে, জীর্ণ শীর্ণ হয়ে টিকে থাকা।