দিনভর চা বাগানে কাজ করে একজন শ্রমিক মজুরি পান ১২০ টাকা, মালিকপক্ষের দাবি নগদে ১২০ টাকা দিলেও নানান সুযোগ সুবিধা মিলে এই মজুরি ৪০২ টাকা। কিন্তু কাগজে কলমে মালিকদের এই হিসাব বাস্তবে দেখেন না শ্রমিকরা। এই বিতর্কের চেয়েও নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে ১৬৮ বছরেও মানবেতর অবস্থা থেকে চা শ্রমিকদের জীবনে এক বিন্দু উন্নতি ঘটেনি।
চা গাছের মতোই যেন চা শ্রমিকদের জীবন। নিয়মিত ছেটে ২৬ ইঞ্চির চেয়ে বাড়তে দেয়া হয় না চা গাছ। ঠিক তেমনি চা শ্রমিকরাও মনে করেন ১৬৮ বছর আগে ব্রিটিশ উপনেবেশিক শাসকরা ৭ ফুট বাই ১৪ ফুট ঘরে রেখে তার যে মানবেতর জীবনের সুচনা ঘুটিয়ে ছিলো সেই বাস্তবতা আজও যায়নি।
চা শ্রমিকদের কাছে চা বাগানটাই পৃথিবী। ঘুম ও জাগরণের পুরো সময় কাটে এখানে। ১২০ টাকা পেতে নানা শর্তে দিনভর পরিশ্রমের জন্য প্রতিদিনের যে সামান্য খাবার দেহের শক্তি যোগায় সেই তালিকায়ও সকালে থাকে চা পাতার ভর্তা কিংবা ভাজি, দুপুরে শুকনা রুটি আর রাতে মরিচ-ভাত। তবুও তাদের মজুরি বাড়ানোর কথা ভাবে না কেউ, ফলে চা গাছের মতোই নিজেদের জীবন মান বাড়ার কোন আশা দেখেন না।
চা বাগান মালিকরা অবশ্য মনে করেন তাদের শ্রমিকরা ভালোই আছেন। তাদের দাবি, নানান সুযোগ সুবিধা মিলিয়ে শ্রমিকদের দৈনিক আয় দাঁড়ায় ৪০২ টাকা। কিন্তু শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা মালিকদের দাবি থেকে বহু দুরে।
চা শ্রমিকরা বলছেন, তাদের শ্রম শোষণের শুরু ব্রিটিশ আমল থেকেই; আজও তার অবসান ঘটেনি। দেশের চা শিল্প ফুলে ফেঁপে বড় হয়েছে, মলিন থেকে ঝলমলে হয়েছে। কিন্তু চা শ্রমিকদের জীবন মানের কোন উন্নতি হয়নি। এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা থেকে বেরুতে চায় তারা। চিরাচরিত শোষণ ব্যবস্থাপনা আর নয়, শ্রম আইনের সকল সুযোগ সুবিধা চায় চা শ্রমিকরা।