বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: দুই যুগ আগে বন্ধের পর নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত হতে যাওয়া দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন একুশে পদক পাওয়া বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক পাকিস্তানের নাম বদলে প্রকাশিত দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদকও ছিলেন তোয়াব খান।
১৯৫৩ সালে সাংবাদিকতায় আসা তোয়াব খান বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। সর্বশেষ দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
পত্রিকার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার দৈনিক বাংলার সম্পাদকের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেয়ার সময় তোয়াব খানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। এ সময় নির্বাহী সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু, নিউজবাংলা২৪.কমের নির্বাহী সম্পাদক হাসান ইমাম রুবেল, বার্তা প্রধান সঞ্জয় দেসহ দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড. এইচএম জহিরুল হক, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাঈনুদ্দীন মোনেম এবং পরিচালক ডা. ফারহানা মোনেমের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তোয়াব খান।
অনুষ্ঠানে তোয়াব খান তার বর্ণাঢ্য সাংবাদিক জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আগেও আমি দৈনিক বাংলার সম্পাদক ছিলাম। এখন দৈনিক বাংলা নতুন আঙ্গিকে বের হচ্ছে। এটা খুবই আনন্দের সংবাদ। সংবাদপত্র জগতের জন্যও আনন্দের।’
দৈনিক বাংলাকে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ায় চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
নতুন সময়ের সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে সেদিনের দৈনিক বাংলা আর আজকের দৈনিক বাংলার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য থাকবে। মানুষের চিন্তাভাবনা এবং সংবাদপত্রের ধারাটিই এখন বদলে গেছে। আজকের দিনে সবাইকে বুঝতে হবে, আমি নিজেই শুধু পত্রিকা বের করব না, মানুষ যাতে পত্রিকা পড়ে তার ব্যবস্থাও করব। সেই ব্যবস্থার সঙ্গে আমরা নিজেরা সবাই যুক্ত হব, তেমনি মানুষ যাতে যুক্ত হয় আমরা তা নিশ্চিত করব।’
সম্পাদক হিসেবে তোয়াব খানকে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমরা এমন একজন ব্যক্তিত্বকে সম্পাদক হিসেবে পেয়েছি, যিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।
‘সাংবাদিক হিসেবে তোয়াব খান একজন আলোকবর্তিকা। তিনি দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে যে আলো ছড়িয়েছেন, সেই আলোর শিখা ধারণ করেই দৈনিক বাংলা নতুন আঙ্গিকে এগিয়ে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, তোয়াব খানের নেতৃত্বে দৈনিক বাংলা আবার পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠবে।’
নির্বাহী সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু বলেন, ‘সাংবাদিকতা জগতে তোয়াব খান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। সাংবাদিকতার বাতিঘর। দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে তোয়াব খানকে পেয়ে আমরা গর্বিত। তার জ্ঞানগর্ভ নির্দেশনা, অভিভাবকসুলভ বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দৈনিক বাংলা এগিয়ে যাবে এবং সময়ের স্রোতধারায় দেশের জন্য আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
২০১৬ সালে একুশে পদক পাওয়া তোয়াব খানের সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে তিনি সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন। এরপর ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে।
১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ থেকে ‘৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তোয়াব খান। দেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিন্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান।
ক্যাপশন: সর্বজনশ্রদ্ধেয় তোয়াব খান বুধবার দৈনিক বাংলার সম্পাদকের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেয়ার সময় তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান দৈনিক বাংলার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলার সাংবাদিকসহ অন্যরা।