শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের থেকে পাচার হওয়া প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার হদিস বের করতে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করা হয় এমন দেশের তালিকায় শুরুর দিকেই আছে যুক্তরাজ্যের নাম। দেশটিতে পাচার হওয়া অর্থ বাংলাদেশে ফেরানোর সম্ভবনা কতটুকু? কীভাবে শুরু হবে তদন্ত প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধে ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যেই অনুসন্ধান শুরু করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের একটা বড় অংশ চলে যায় যুক্তরাজ্যে। পাচারকৃত এই অর্থের হদিস বের করতে সম্প্রতি স্টারমার প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার জন্য ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অঢেল সম্পদ ও রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০ কোটি পাউন্ড মূল্যের সাড়ে তিনশটিরও বেশি স্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মতো আরও অনেক রাঘব বোয়াল এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলেও দাবি করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কোনো নাগরিক দেশ থেকে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে পাঠাতে পারবেন না। অথচ ব্রিটেনে হাজার কোটি টাকার পাচার করেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম হয়। ব্রিটেনের আইনজীবীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইনি সহায়তা সংস্থা, এমএলএ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব।
ব্রিটেনের অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবি ব্যারিস্টার কামরুল হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনি সহায়তা সংস্থা বা এমএলএ প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে। স্বাক্ষীদের বয়ান নিতে পারবে। তারা ইচ্ছে করলে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল হলেও অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে অর্থপাচারে জড়িতদের বাংলাদেশের আদালতে অভিযুক্ত করে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরত নেয়ার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।’
ব্রিটেনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের প্রফেসর ড. মুশফিক উদ্দিন বলেন, ‘এটি খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ। প্রথমেই বাংলাদেশ সরকারকে লোকাল আদালতে তাদেরকে লড়তে হবে। যেসমস্ত দেশে টাকাগুলো পাচার হয়েছে সেসব দেশের সাথে সমঝোতা করতে হবে যাতে তারা পাচারকৃত অর্থগুলো ফেরত দিতে পারে।’
যদিও, বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার নজির খুবই কম। তবে বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারলে এই অর্থ ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের।