একসঙ্গে ৪০ বর ও ৪০ কনে পাশাপাশি বসে রয়েছেন। আর অন্যদিকে অতিথিরা বসেছেন। সবাই দুই হাত তুলে দোয়া করছেন তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। এখানে যারা কনের সাজে রয়েছেন তারা সকলেই এতিম। আর যারা বর রয়েছেন তারা কেউ গার্মেন্টসে চাকরি করেন, কেউবা কোনো বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন আবার কেউবা কৃষি কাজ করেন। ৪০টি বিয়েই হয়েছে যৌতুকবিহীন।
শুক্রবার (২৭ মে) দুপুর আড়াইটায় দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ীস্থ গ্রিন ভিউ কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে এ গণবিয়ের সংবর্ধনা আয়োজনে দৃশ্যটা ছিল এমনই।
একসঙ্গে ৪০ জন এতিম মেয়ের যৌতুকবিহীন বিবাহত্তোর বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিনাজপুর শিশু নিকেতন (এতিমখানা)। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। এ সময় দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী জয়নুল আবেদিন, দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম, শিশু নিকেতন পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোজাফফর আলী মিলন প্রমুখ।
সংবর্ধনা শেষে বরের জন্য একটি করে বাই সাইকেল, কনের জন্য একটি করে সেলাই মেশিন ও সংসারের আনুসাঙ্গিত জিনিসপত্র বিতরণ করা হয়।
শিশু নিকেতনের সভাপতি মোজাফফর আলী মিলন জানান, এই শিশু নিকেতনটি ১৯৭৯ সালে ১০ জন এতিম বালিকাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এখানে এতিমদের এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা শিখিয়ে ১৮ বছর হলে ভালো পাত্র দেখে যৌতুকবিহীন বিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে একসঙ্গে শিশু নিকেতনের ২০ এতিম মেয়ের বিয়ে প্রদান করা হয়। এরপর থেকে ভয়াবহ করোনার কারণে একসঙ্গে বিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ৪০ এতিম মেয়ের বিয়ে ২০১৯ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যৌতুকবিহীন বিয়ের এসব কন্যারা সকলেই স্বাবলম্বী। তারা প্রত্যেকেই ড্রেস মেকিং ও হ্যান্ডিক্রাফট প্রশিক্ষণ, রান্নার প্রশিক্ষক, কম্পিউটার শিক্ষা, খেলাধুলা ও সঙ্গীত চর্চায় পারদর্শী। এ পর্যন্ত এই নিকেতনের মাধ্যমে ১৭৪ জন কন্যাশিশুকে উপযুক্ত করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এখানে কন্যাশিশু রয়েছে আরও ১০৬ জন।
জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, এতিমদের পাশে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসা উচিত। আজকে যারা যৌতুকবিহীন বিয়ে করলো তাদের মঙ্গল কামনা করি। এখানে যারা রয়েছেন বর কিংবা কনে তাদের কর্মসংস্থান করা হবে। দিনাজপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল, আইটি পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। রয়েছে সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান করার উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি।