প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী ৪ মার্চ কাতার সফরে যাচ্ছেন। কাতারের রাজধানী দোহায় ৫ থেকে ৯ মার্চ এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তিনি এলডিসি উত্তরণে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানাবেন।
এটিই হবে এলডিসি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের শেষ এলডিসি শীর্ষ সম্মেলন। কারণ, ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে।
করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। এতে এলডিসি ও উন্নয়নশীল দেশগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ওই দেশগুলির জন্য বড় ধরনের বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ এই বিষয়গুলি সম্মেলনে উত্থাপন করবে। এছাড়াও ২০২৬ সালের পরেও বাংলাদেশ যে বাণিজ্য সুবিধাগুলি এখন এলডিসি হিসাবে উপভোগ করছে- তা অব্যাহত রাখতে উন্নত দেশগুলির সমর্থন চাইবে।
গণমাধ্যমে সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোমেসি শাখার মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন বলেন, সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল ছানি ও প্রধানমন্ত্রী খালিদ বিন খালিফা বিন আব্দুল আজিজ আল ছানি’র সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানী মূল্য বৃদ্ধির পাওয়া জ্বালানী তেলের ক্ষেত্রে কাতারের সহায়তা চাইতে পারেন।
সম্মেলন চলাকালে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
সেহেলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরকালে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করবেন, কারণ ৫ মার্চ সকালেই শীর্ষ সম্মেলনের ‘উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে’ বিশেষ অতিথি বক্তা হিসাবে তাঁর ভাষণ দেওয়ার কথা। এই অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব এ্যান্থোনি গুতেরাস, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট সাবা কোরিসি এবং মালয়’র প্রেসিডেন্ট ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহের (এলডিসি) বর্তমান চেয়ারপার্সন ড. লাজারাস কারথে চকয়েরারও ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একই দিন বিকেলে সম্মেলনের ফাঁকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরনের পথে থাকা বাংলাদেশ, নেপাল এবং লাও পিডিআর- এই তিন এশীয় দেশ আয়োজিত “২০২১ সালের উত্তোরন দলের জন্য টেকসই ও সহজ পথ” শীষর্ক এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৬ মার্চ সকালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলোপমেন্ট অথরিটি’র (বিডা) যৌথ আয়োজনে “বাঙলার বাঘের উত্থান : বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা” শীষর্ক এক ব্যবসায়িক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিবেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিনে বিকেলে সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ আয়োজিত “স্বল্পোন্নত দেশে স্মার্ট ও ইনোভেটিভ সোসাইটির জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ” শীর্ষক এক সেমিনারে যোগ দিবেন। মিসর, সিঙ্গাপুর এবং এস্তোনিয়ার মন্ত্রী পযার্য়ের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দিবেন। ডব্লিউটিও, ইউএন, টেক ব্যাংক ফর এলডিসি, ওইসিডিসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চ পযার্য়ের কর্মকর্তারাও এই অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিনে সন্ধ্যায় ইরাক, জর্ডান লেবানন এবং তুরস্কের সমন্বয়ে গঠিত জিসিসি দেশসমূহের বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতগন আয়োজিত ‘আঞ্চলিক দূত সম্মেলন’এ যোগ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ মার্চ সকালে কো-চেয়ার হিসাবে “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সংহতিতে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি” শীর্ষক” উচ্চ পযার্য়ের এক গোল টেবিল বৈঠকে যোগ দিবেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিন বিকেলে সম্মেলনের ফাঁকে “গ্লোবাল পাটনারশীপ ফর স্মুথ এন্ড সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন: মার্চিং টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ” শীষর্ক বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিবেন। অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী, আঙ্কটাড জেনারেল সেক্রেটারি এবং ডব্লিউটিও, ইউএনআইডিও এবং ওইসিডিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ যোগ দিবেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিন সন্ধ্যায় কাতারে বসবাসকারি প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৮ মার্চ দেশের উদ্দেশে কাতার ত্যাগ করবেন।