শান্তিচুক্তির পেরিয়েছে ২৫টি বছর। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে শান্তিবাহিনীর দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারী সদস্যরা। শান্তিচুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয়। সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও, সমাধান আসেনি চুক্তির মূল শর্ত সন্ত্রাসবাদে। উল্টো দিন দিন বেড়ে চলেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি।
পরিসংখ্যান বলছে, শান্তিচুক্তি পরবর্তী দুই যুগে হতাহতের সংখ্যা, স্বাধীনতার পর থেকে চুক্তির আগে ২৭ বছরের চেয়েও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি। শান্তিচুক্তির আগে-পরে বেসামরিক ব্যক্তির নিহতদের সংখ্যা প্রায় সমান। তবে আহত বেড়েছে দুই গুণের বেশি। আর ৪ গুণের বেশি অপহরণের সংখ্যা। আর শান্তিচুক্তির পর কমেছে সামরিক সদস্যদের হতাহতের সংখ্যা।
শান্তিচুক্তির আগে নিহত হয়েছিল ১৬৪৭ জন এবং শান্তিচুক্তির পরে নিহত হয় ১৩১৫ জন। এর মধ্যে শান্তিচুক্তির আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি ২৩৮, বাঙালি ১০৫৫, সামরিক সদস্য ৩৫৪ জন নিহত হয়। শান্তিচুক্তির পরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি ৮৯৯, বাঙালি ৩৯০, সামরিক সদস্য ২৬ জন নিহত হয়। শান্তিচুক্তির আগে আহতের সংখ্যা ছিল ১২৪১ জন এবং অপহৃত হয়েছিলেন ৭৭৮ জন। শান্তিচুক্তির হবার আগে যতজন বিভিন্ন সংঘর্ষে আহত এবং অপহৃত হয়েছিলেন তার চেয়ে বেশী হয়েছে শান্তিচুক্তির পরে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় শান্তিচুক্তির পরে আহতের সংখ্যা হয় ১৮২৩ জন এবং অপহৃত হন ৩২৭৬ জন।
অস্ত্র জমা দিয়ে শান্তিবাহিনী থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাদের যে স্বপ্ন ছিলো তার কতটুকু পূরণ হলো ২৫ বছরে? গেরিলা ও কমান্ডাররা জানান, স্বপ্নের কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। আগে শুধু ২টি গ্রুপ ছিলো, এখনতো অনেক গ্রুপ ভাগ হয়ে গেছে। যেখানে উন্নতির কথা বলবো সেখানে সবাই মারামারি নিয়েই ব্যস্ত।
সত্যতা স্বীকার করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ও পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী জানান, সংঘাত বাড়িয়ে তুলছে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এর সমাধান কতদূর তা জানেন না তারাও।
আর জননিরাপত্তায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক।