বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: জাটকা আহরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে অনুষ্ঠিত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২২-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, “আইন লঙ্ঘনের এখতিয়ার কাউকে দেওয়া হবে না। মাঝেমধ্যে কিছু দুর্বৃত্ত দরিদ্র মৎস্যজীবীদের ব্যবহার করে নিষিদ্ধ সময়ে তাদের জাটকা আহরণে সম্পৃক্ত করে। জাটকা আহরণের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি যারা অবৈধ জাল তৈরি ও ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে বরফ কল বন্ধ রাখতে হবে, যাতে দুষ্টু লোকরা জাটকা আহরণ করে সেটা সংরক্ষণ করতে না পারে। বাজারসমূহে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রাখা হবে। যেখানে যে জাটকা নিয়ে আসবে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। ইলিশ সম্পদ নষ্ট করার সুযোগ কোনভাবেই কোন দুর্বৃত্তকে দেওয়া যাবে না”।
এ বিষয়ে তিনি আরো যোগ করেন, “ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষা শুধু দাপ্তরিক দায়িত্ব নয়, নৈতিক কর্তব্যও বটে। এ সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে বিশ্বের ৮০ ভাগ ইলিশ উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে না পারলে আমাদের ইলিশ উৎপাদনের শীর্ষস্থান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই জাটকা সংরক্ষণে সম্মিলিত সহযোগিতা থাকতে হবে। একজন মানবিক ও কর্মতৎপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আমলে আমরা ব্যর্থ হতে চাই না। কোন প্রলোভন বা দুষ্টু লোকের প্ররোচনায় কেউ যেন ভুল পথে না যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে”।
রেজাউল করিম আরো বলেন, “জাটকা নিধন বন্ধ করতে না পারলে একসময় ইলিশ আর থাকবে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বলতে হবে এই আকৃতির, এই রঙের, এই স্বাদের একটা মাছ ছিল, যে মাছের নাম ইলিশ। আমরা নিশ্চয়ই সেটা হতে দিতে পারি না। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মূল উদ্দেশ্য কেউ যেন নির্ধারিত আকারের চেয়ে ছোট ইলিশ মাছ আহরণ না করে, বিপণন না করে। আমাদের লক্ষ্য মৎস্যজীবীরাই ইলিশ মাছ ধরুক, মানুষ মাছ খাওয়ার সুযোগ পাক। কিন্তু সেটা যেন ইলিশ মাছ পরিপক্ক অবস্থায় আসার পর হয়”।
তিনি আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অভয়াশ্রম করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ করে দেয়াসহ নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছেন। মা ইলিশ আহরণ ও জাটকা নিধন বন্ধ থাকাকালে মৎস্য আহরণে সম্পৃক্তরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য তাদের ভিজিএফ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, ইলিশের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানের কারণে যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মৎস্যজীবীদের সহায়তা দেওয়া অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে”।
মন্ত্রী বলেন, “সারা বিশ্বে উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ ভাগ আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। ইলিশের জিআই সনদ বাংলাদেশ পেয়েছে। বিশ্বে ইলিশে বাংলাদেশের যে শীর্ষ অবস্থান এট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে হয়েছে”।
মন্ত্রী আরো যোগ করেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের ভাতে-মাছে বাঙালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমাদের মৎস্যসম্পদ সমৃদ্ধ করতে হবে। জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী এবং মৎস্য খাতে যারা বিভিন্নভাবে কাজ করেন তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে অনিবার্য। শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্নভাবে জাটকা রক্ষায় সম্পৃক্ত থাকবেন। আমাদের প্রত্যাশা জনপ্রতিনিধিরা সহায়তা করবেন, মৎস্য আহরণে সম্পৃক্তরা সহায়তা করবেন, যারা মৎস্য বিপণনে জড়িত তারা সহায়তা করবেন”।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ নৌ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলু রায়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং-এ পদ্মা নদীতে বর্ণাঢ্য নৌ-র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।