শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নামল ১৯ বিলিয়ন ডলারে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ জাতীয় সংসদকে হাইকোর্টের ১৬ পরামর্শ পাকিস্তান নারী দলকে হারিয়ে দিলো বাংলাদেশ কাপুরুষের কাছে রাজনীতি শোভা পায় না: কাদের সিইসির সঙ্গে তিন গোয়েন্দা প্রধানের সাক্ষাৎ ‌‌বিএনপি দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে- তথ্যমন্ত্রী ক্ষমতাসীনরা নাশকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে : রিজভী ইসরায়েলবকে হিজবুল্লাহর হুঁশিয়ারি ইসরায়েল থেকে আরও ২ দেশের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত পেনশন স্কীমে ব্যাপক সাড়া, ৩দিনে ৪০ হাজার আবেদন, ২ কোটি টাকা জমা ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে ৫২ আবেদন, উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন প্রধান তিন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, চীনের খপ্পড়ে বাংলাদেশ পড়েছে কি না প্রশ্ন দুই কংগ্রেস সদস্যের বাড়তি দর নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচের পর এবার ডিম আমদানির পরিকল্পনা

ডেঙ্গুর সবচেয়ে ক্ষতিকর ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : আগস্ট ২৯, ২০২১

ডেঙ্গুর সবচেয়ে ক্ষতিকর ধরনগুলোর একটি ডেনভি–৩–এ বাংলাদেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তাঁরা বলেছেন, ডেঙ্গুর এই ধরনের কারণে দ্রুত রোগীদের রক্তের কণিকা প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। সে কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের হাসপাতালে নিতে হচ্ছে।

দেশে এবারের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ বা ধরনকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।

তাঁরা বলছেন, এই সেরোটাইপের নাম ডেনভি–৩। এর কারণেই দেশে এ বছর ডেঙ্গু রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

ডেঙ্গু ভাইরাসের জিন–নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স) বের করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা এসব কথা জানিয়েছেন।

রোববার ‘ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য উন্মোচন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান আফতাব আলী শেখ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, এ বছরের জুলাইয়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা নির্ধারণের জন্য এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে ২০ জন ডেঙ্গু রোগীর কাছ থেকে নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে।

আফতাব আলী শেখ জানান, ডেঙ্গুর নমুনাগুলো জিনোম সিকোয়েন্স করে প্রতিটিতেই ডেনভি–৩ সেরোটাইপ মিলেছে। তবে ডেঙ্গুর মিউটেশনবিষয়ক উল্লেখযোগ্য গবেষণা না থাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, ডেঙ্গু হওয়ার পর রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত নেমে যাচ্ছে, আগে যেটা ধীরগতিতে নামত। ৯৫ শতাংশ রোগী ঢাকার। শিশুরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। উপসর্গও ভিন্ন ভিন্ন পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করা হলে ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য আরও ভালোভাবে জানা যাবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ—ডেনভি–১, ডেনভি–২, ডেনভি–৩ ও ডেনভি–৪। ২০১৬ সালের আগে দেশে ডেনভি–১ ও ডেনভি–২ দ্বারা মহামারি সংঘটিত হয়। বাকি দুটি সেরোটাইপ দেশে তখনো শনাক্ত হয়নি। ২০১৭ সালে দেশে প্রথম ডেনভি–৩ শনাক্ত হয়। এর পরের বছর ২০১৮ সালে ডেনভি–৩ সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ২০১৯ সালে এটি মহামারি আকার ধারণ করে। সে বছর বিসিএসআইআর ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছিল।

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, প্রাণীর শরীরের জিনে সব জিনগত তথ্য থাকে। জিনোম সিকোয়েন্স করলে বিশেষ বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করা যায়। এতে জিনগত ত্রুটি নির্ণয় ও নির্মূল করা সম্ভব হয়।

জিনোমিক গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন।

গেটসনোটসের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, পৃথিবীতে মশার কামড়ে মানুষের বেশি মৃত্যু হয়। মশার কামড়ে প্রতিবছর মারা যায় ৭ লাখ ২৫ হাজার, সেখানে মানুষের দ্বারা মানুষ খুন হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার। আর সাপের কামড়ে মারা যায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

সেলিম খান বলেন, ডেনভি–৫ বা ৬ সামনে আসতে পারে। প্রাকৃতিকভাবেই ভাইরাসটির রূপান্তর (মিউটেশন) হয়েছে। এবার ডেঙ্গু অন্যান্যবারের চেয়ে ভয়াবহ। এবার দেখা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি রক্তের প্লাটিলেট পড়ে যাচ্ছে, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সি। তিনি বলেন, ডেনভি–১–এ আক্রান্ত হলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তি ডেনভি–২, ৩ ও ৪–এ আক্রান্ত হলে আগের ওই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উল্টো ক্ষতিকারক হয়। এর জন্য নিয়মিত ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা দরকার।

অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, জিনোম সিকোয়েন্স করে জানা গেল, দেশে ডেনভি–৩ দিয়ে প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এই শনাক্তকরণ পিসিআর পদ্ধতিতে সম্ভব হয় না। এর জন্য জিনোম সিকোয়েন্স করা লাগে। ডেঙ্গুর টিকা গবেষণায় এটি কাজে আসবে।
কতটা মারাত্মক, এমন প্রশ্নে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘ভয়াবহতার দিক দিয়ে ডেনভি–২ ও ডেনভি–৩ বেশি ভয়াবহ, অন্য দুটির চেয়ে। ভয়াবহতা কমবেশি হয়। কারণ, জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা যায়, কিছু কিছু প্রোটিন এই দুই সেরোটাইপে আলাদা। এ কারণে ক্ষতিকারক।’

জিনোমিক গবেষণাগারের সাতজন বিজ্ঞানী ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের গবেষণা চালান। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদেরা এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন। ডেঙ্গু ভাইরাসের একেকটি নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স করতে ৭০ হাজার টাকা করে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিসিএসআইআরের সদস্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ শওকত আলী, সদস্য (উন্নয়ন) মোহাম্মদ জাকের হোছাইনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ