২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণেই বাংলাদেশীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আটকে আছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, এই সিন্ডিকেটের হোতা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনার রিক্রুটি এজেন্সিজ’র (বায়রা) সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন।
বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বায়রা সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোট-এর ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন জনশক্তি ব্যবসায়ীদের নেতারা স্বপনসহ সিন্ডিকেটে নাম আসা সকল রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ মালিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে বিচারের দাবি জানানো হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মহাজোটের সংগঠক ও বায়রা’র সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী। এছাড়াও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বায়রা’র সাবেক সভাপতি আবুল বাশার, সাবেক মহাসচিব ও শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান।
এছাড়াও সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন, আবুল বারকাত, সাবেক অর্থসচিব ফখরুল ইসলাম, রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান ও মহাসচিব আরিফুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কোন সিন্ডিকেটকে অনুমোদন না দিয়ে অন্য ১৩টি সোর্স কান্ট্রির মতো সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর দাবিতে এবং ২৫ সিন্ডিকেটের অপচেষ্টার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক নেতৃবৃন্দ অন্য ১৩টি সোর্স কান্ট্রির মতো বাংলাদেশকেও একই প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরাজমান অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মালয়েশিয়ার সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
বায়রা’র সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেন, অতীতে ১০ সিন্ডিকেটের কারণে কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছিল; এবারও সিন্ডিকেট হলে ব্যয় আরো বাড়বে। এছাড়া যারা সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত, অতীতে তারা কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করেছেন।
আবুল বাশার বলেন, অতীতে ১০ সিন্ডিকেটের অনেকে কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছে। কর্মীদের কাছ থেকে ৩৭ হাজার টাকা নেয়ার পরিবর্তে ৩-৪ লাখ টাকা নিয়ে বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করেছে। আবারো তারা সিন্ডিকেট করছে। বিভিন্নভাবে ২৫ সিন্ডিকেটের কথা আসছে। তাদের অপচেষ্টার কারণেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলছে না। সরকারের কাছে দাবি করবো, যাদের নাম এই সিন্ডিকেটে আসবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হোক। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হোক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক, যাতে আগামীতে আর কেউ এই অপতৎপরতা করতে সাহস না করে।
তিনি এও বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমিকের অভিবাসন ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাবে। তারা অবৈধপথে বিদেশে অর্থপাচার করবে। এতে শ্রীলঙ্কার মতো দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান বায়রা’র দুইবারের সাবেক এই সভাপতি।
বায়রা’র সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশীয় একটি চক্রের সহায়তায় মালয়েশীয় কিছু লোক বাংলাদেশকে ‘মানি মেকিং মেশিন’ বানানোর চেষ্টা করছে। সিন্ডিকেট হলে আগের মতো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিবাসনব্যয় বৃদ্ধি পাবে। শত শত জনশক্তি ব্যবসায়ী বঞ্চিত হবেন। শ্রমবাজারে অরাজকতা হবে।
মালয়েশিয়া আরো ১৩টি সোর্সকান্ট্রি থেকে স্বাভাবিক নিয়মে কর্মী নিচ্ছে। সেক্ষত্রে শুধু বাংলাদেশ থেকে স্বাভাবিক নিযমের বাইরে গিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক নিলে সেটা হবে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য অমর্যাদাকর।
শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের সরকার এই সিন্ডিকেট চায় না। আমরা ব্যবসায়ীরাও এটা চাই না। বৈধ সকল লাইসেন্সধারী যাতে কর্মী পাঠাতে পারে।
টিপু সুলতান বলেন, অতীতে যারা ১০ সিন্ডিকেট করেছিলেন তাদের দু’য়েকজন বাদে সবাই নতুন এই ২৫ সিন্ডিকেটে আছেন। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বায়রা’র সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন। আমরা সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজার চাই।