সৌদি আরবে বাংলাদেশ বিমানের জিএসএ নিয়োগ নিয়ে চলছে প্রভাবশালী মহলের দৌড়ঝাঁপ। সর্বোনিম্ম দরদাতাকে ঠুনকো অজুহাতে জিএসএ নিয়োগ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা কোম্পানিকে দেয়ার সব আয়োজন চুড়ান্ত করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিমান। এতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে সরকারী এই প্রতিষ্ঠান। বিমান সূত্রে জানা গেছে সৌদি আরবের পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মদিনা,রিয়াদ,জেদ্দা ও দাম্মাম বিমানবন্দরের জন্য বাংলাদেশ বিমানের।
জিএসএ নিয়োগের জন্য প্রস্তাবনা আহবান করা হয় সম্প্রতি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে ১০/১২ টি কোম্পানি প্রস্তাবে সাড়া দেয়৷ তাদের মধ্যে থেকে কাগজপত্র এবং আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে তিনটা বিদেশি কোম্পানিকে শর্ট লিস্ট করে। সেখানে সৌদি রাজকীয় পরিবারের মালিকানাধীন মনসুর আল মুজাহিদ কোম্পানি জিএসএ কমিশন রেট দেয় ১.৮৫%। অন্যদিকে কানো কোম্পানি ও এইস কোম্পানি উভয়ই বিমানের টিকেট থেকে ৩% কমিশনে জিএসএ নিয়োগ হওয়ার প্রস্তাব দেয়।
অভিযোগ আছে ঠুনকো অজুহাতে সর্বনিম্ম দরদাতা সৌদি মালিকানাধীন মনসুর আল মুজাহিদ কোম্পানিকে জিএসএ নিয়োগ না করে সর্বোচ্চ দর দাতাকে ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারা কোম্পানি কানোকেই ৩% রেটে কাজ দেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে আগামীকাল শনিবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক বসছে।
আগামীকালের সভায় কানো কোম্পানিকে ৩% রেটে কাজ দেয়ার সুপারিশ করে বিমান বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। দুর্নীতিবাজ এই চক্রটির পছন্দের কানো কোম্পানিকে সৌদি আরবে বিমানের জিএসএ নিয়োগ দিলে শত শত কোটি টাকা রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
নাম প্রকাশে একটি সূত্র জানিয়েছেন বিমানের মহা ব্যবস্থাপক( বিপনন) মোহাম্মদ শামসুল করিমের নেতৃত্বাধীন একটি দুর্নীতিবাজ চক্র রহস্যজনক কারনে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত কানোকেই ৩% কমিশন রেটে বিমানের জিএসএ নিয়োগের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
সর্বনিম্ম দরদাতা সর্বোচ্চ দর দাতাকে মনসুর আল মুজাহিদ কোম্পানিকে কাজ না দিতে তিনটি নিজস্ব অফিস না থাকার মিথ্যা অভিযোগ করছেন। অথচ পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইন্স, কাজাখস্তানের স্ক্যাট এয়ারলাইননের জিএসএ হিসেবে সউদিতে আরবের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিমান বন্দরে সুনামের সাথে কাজ করছে দীর্ঘদিন যাবত।
সউদী রাজকীয় পরিবারের মালিকানাধীন মনসুর আল মুজাহিদ কোম্পানি জেদ্দা,ইয়াম্বু,দাম্মাম নৌ বন্দরের হ্যান্ডেলিং কাজেও নিয়োজিত। এছাড়া পুরো জেদ্দা শহরের ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও এই কোম্পানি।
সৌদি আরবে জিএসএ নিয়োগ সম্পর্কে বিমানের সাবেক পরিচালক জানান- এটা খুবই লোভনীয় একটি জিএসএ। বিমান বছরের হাজার হাজার কোটি টাকার টিকেট বিক্রি করে থাকে রিয়াদ,মদিনা ও জেদ্দার জিএসএ দ্বারা। যার কমিশন আসে কোটি কোটি টাকা। সেজন্যই যখনই চুক্তি নবায়নের সময় হয় তখনই সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি চক্র। এবার যে তিনটি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে তার মধ্যে কানো ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত কোম্পানি। একমাত্র মনসুর আল মুজাহিদ কোম্পানিই হচ্ছে সৌদি আরবের রাজকীয় পরিবারের মালিকাধীন যার বিশ্বের শীর্ষ একাধিক এয়ারলাইন্সের জিএসএ। এখানে একাধিক বাংলাদেশ নাগরিক কর্মরত।
এমন একটি নির্ভরযোগ্য কোম্পানিকে বাদ দিয়ে বিমান কানোকে সর্বোচ্চ রেটে জিএসএ দেয়ার পক্ষে। এটা অবশ্যই বড় ধরনের কেলেঙ্কারির জন্ম দেবে। এ সম্পর্কে বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিমানের পক্ষ হয়ে যারা সৌদি আরব গিয়ে এ কানো কোম্পানির অফিস পরিদর্শনে গেছেন তারা নিজেরাও সন্তোষ্ট নন। তারপরও তারা কিভাবে সাফাই গেয়েছেন তা রহস্যজনক। বিমানের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণের চারটি স্টেশন মদিনা, রিয়াদ, জেদ্দা এবং দাম্মামের জিএসএ নিয়োগ নিয়ে বরাবরই কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এবারও ওই মিশন নিয়ে সৌদি আরব থেকে ঢাকায় এসে তদ্বিরে নেমেছেন একাধিক ভারতীয় নাগরিক।
মহা ব্যবস্থাপক( বিপনন) মোহাম্মদ শামসুল করিমের তার বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমিসহ ৫ জন সদস্য আছে মূল্যায়ন কমিটিতে। একজন সদস্য হিসেবে আমি কিভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারি কোন বিশেষ কোম্পানিকে জিএসএ নিয়োগ দিতে। তাছাড়া কোন কোম্পানি কত রেট দিয়েছে,সেটা খুবই গোপনীয় বিষয়।
কানো কোম্পানিকে জিএসএ নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন,এখনো কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মূল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই করে নির্বাহী কমিটিতে সুপারিশ পাঠাবে। মূল্যায়ন কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেন,বিমানের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে বা যারাই কাজ করবেন,তারাই দুর্নীতিবাজ।