ডিম এবং মুরগীর গোশতের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং খামারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে মূল্য নির্ধারণ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ।
সম্প্রতি হঠাৎ করে ডিম এবং মুরগীর গোশতের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার প্রেক্ষপটে এমন একটি দাবি নিয়ে মূল্য নির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবনা তৈরি করেছে।
সোমবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কেআইবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির নেতারা এই প্রস্তাব দেন।
সংগঠনের ঢাকা বিভাগের সভাপতি কামাল উদ্দিন নান্নুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোসাদ্দেক হোসেন।
এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মূল্য নির্ধারণ কমিটিও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত প্রতিনিধি এবং ভোক্তা অধিদফতর, প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রধান থাকবেন।
পাশাপাশি এই কমিটিতে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন, ব্রিডার্স এসোসিয়েশন এবং ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি বা তার প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।
সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব বা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে দেখা করে মূল্য নির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খন্দকার মো. মহসিন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রংপুরের খামারি ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই ডিম এবং মুরগীর গোশতের বাজার বেড়েছিল। কিন্তু এর সাথে আমাদের খামারীরা কেউই জড়িত নন।
ডিম আমদানির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি খামারিরা খামার বন্ধ করে দেই, সামনে ২০ টাকা দামে ডিম খেতে হবে। প্রান্তিক খামারিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিভাবে দাম বাড়ল সেদিকে হাত দেন।
চুয়াডাঙ্গার খামারি জাহিদুর রহিম জোয়ার্দার বলেন, আমরা যে ভুট্টা কিনতাম ১৫-১৭ টাকা করে সেটি ৩৪-৩৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সয়াবিনের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের বিল বেড়েছে। কর্মচারিদের বেতনও বেড়েছে। দিন শেষে আমাদের কাছে কিছু নেই। লাভ খাচ্ছে যারা নিয়ে বিক্রি করছে। আমরা উৎপাদক টাকা পাচ্ছি না। যিনি ডিম আমদানির কথা বলছেন তিনি কিন্তু সয়াবিনের বিষয়ে বলছেন না, ভূট্টার দাম কমছে না। আমাদের অবস্থা খারাপ। আমাদের একটা ডিম প্রোডাকশন করতে সাড়ে ৯ টাকা খরচ হয়, কিন্তু বিক্রি করি সাড়ে আট টাকায়। সেখানেও লসে বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে খামার কতোদিন টিকিয়ে রাখতে পারব?
পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন বলেন, দেশে বর্তমানে পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা ৭৯ হাজার। করোনার তিন বছরে খামারিরা ডিম ও মুরগী উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৭৮ ভাগ ডিম প্রান্তিক খামারিরা সরবরাহ করেন। বড় কোম্পানীগুলো সরবরাহ করে ২২ ভাগ। প্রতিদিন ৪ কোটি ৫৮ লাখ ডিম। মার্কেটে সরবরবাহ করে। বাজার স্বাভাবিক হচ্ছিলো, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য পোভাব পড়েছে। ভুট্টা ৩৪-৩৬ টাকা কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিমের দাম ফার্মে ১-২ টাকা দাম বাড়লেও বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা হালি। ভোক্তা পর্যায়ে এসব ম্যাসেজ যাওয়ায় নেতিবাচক ধারণা শুরু করেছে।
রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাদের খান বলেন, ব্যাংকার থেকে স্বাধীন ব্যবসা হিসেবে খামার ব্যবসায় আসলাম। এরপর ডিম ব্যবসা। ২০০০ সালে খামার শুরু করেছিলাম। ১২০ জন আড়ৎদার ছিলেন। এখন আছেন শুধু ২৬ জন। দেনার দায়ে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আড়ৎদাররা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল, এই অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।