বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ৬৯ ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানের তালিকা এবং এর মধ্যে ১০ ব্যক্তি–পরিবারের বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থার তথ্য উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে হলফনামা আকারে ওই প্রতিবেদন জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
বিষয়টি জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক প্রথম আলোকে বলেন, পানামা পেপার্সের ৪৩ জন এবং প্যারাডাইস পেপার্সের ২৬ জনের নামের তালিকা নিয়ে কাজ করছে বিএফআইইউ। নাম আসা ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশে চিঠিও পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে ১০ ব্যক্তি–পরিবারের বিষয়ে আর্থিক লেনদেন, বিদেশে অবস্থান ও ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি আগামী রোববার আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিক ও কোম্পানির পাচারের মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংকগুলো, বিশেষত সুইস ব্যাংকে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস গত বছরের ফেব্রুয়ারি একটি রিট করেন। এর শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন। সুইচ ব্যাংকসহ দেশের বাইরে বিদেশি ব্যাংকে গোপনে পাচার করে অর্থ রাখা ব্যক্তির নাম–ঠিকানা, অর্থের পরিমাণ এবং ওই অর্থ উদ্ধারে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাচারে জড়িত দুর্বৃত্তদের নাম, ঠিকানা ও পাচার করা অর্থে তাদের বিদেশে বাড়ি তৈরিসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে নির্দেশ দেন। দুটি বিষয় গত বছরের ৫ ডিসেম্বর একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক সেদিন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারি নিয়ে ৪৩ ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা উল্লেখ করা হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ওয়েবসাইটে দেশভিত্তিক তালিকা পর্যালোচনা করে ৪৩ ব্যাক্তি–প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ার কথা জানায় সংস্থাটি। প্রতিবেদনে দুদক বলেছে, মানি লন্ডারিং আইনে ২৮টি প্রেডিকেট অপরাধের মধ্যে শুধু ঘুষ ও দুর্নীতি নিয়ে দুদক কাজ করে। ওই অভিযোগ দুদকের তফসিলবহির্ভূত বলে অনুসন্ধানকাজে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না।
দুদকের প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মানি লন্ডারিং রোধ এবং পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশের যেসব ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে বলেন আদালত। এর ধারাবাহিকতায় ওই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হলো।
তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, তার পরিবারের সদস্য নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল, তাজওয়ার মো. আউয়াল ও মাল্টিমোড লিমিটেড, আওয়ামীলীগ নেতা কাজী জাফরুল্লাহ ও তার স্ত্রী নিলুফার জাফর, মোগল ফরিদা ওয়াই, শহিদ উল্লাহ, চৌধুরী ফয়সাল, আহমাদ সামির, ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, মুসা বিন শমসের, ভেনাস ওভারসিজ কোম্পানি, ফজলে এলাহী, ডাইনামিক এনার্জি, কেএইচ আসাদুল ইসলাম, ইন্ট্রিপিড গ্রুপ, জুলফিকার আহমেদ, খালেদা শিপিং কোম্পানি, তাজুল ইসলাম তাজুল, জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মোহাম্মদ মালেক, বেঙ্গল শিপিং লাইনস, ইমরান রহমান, ওসান আইস শিপিং কোম্পানি, মোহাম্মদ এ আউয়াল, শামস শিপিং লিমিটেড, এরিক জনসন আনড্রেস উইলসন, ফারহান ইয়াকুবুর রহমান, ইন্ট্রিডিপ গ্রুপ, তাজুল ইসলাম, আমানুল্লাহ চাগলা, পদ্মা টেক্সটাইল, মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, নিউটেকনোলজি ইনভেস্টমেন্ট, মোহাম্মদ রেজাউল হক, মোহাম্মদ কামাল ভূঁইয়া, তুহিন-সুমন, জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মাহতাবা রহমান, সেলকন শিপিং কোম্পানি, ফারুক পালওয়ান, মাহমুদ হোসাইন, গ্লোবাল এডুকেশন সিস্টেম এবং শাহনাজ হুদা রাজ্জাক ও সাউদার্ন আইস শিপিং কোম্পানি।